
shunyo theke shuru/oimookh/@indrila
প্রথম পর্ব:
_____________________________________________________________________________________________________________________________
চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আছে …কারোর মুখই ঠিক ষ্পস্ট বোঝা যাচ্ছে না… কানে ভেসে আসছে শুধু কিছু কথার রেশ …কেউ যেন ডাকছে ‘ মা মা ওমা’…পাশ থেকে আরেকটা অপরিচিত কণ্ঠস্বর ‘মিসেস সেন …একবার তাকিয়ে দেখুন …আপনাকে ডাকছে তো’ … চোখটা কোনক্রমে একটু ফাঁক করে ঘোলাটে চোখে মোহনা দেখল, একটা সুঠাম অবয়ব, ঝাঁকড়া চুল, চওড়া কাঁধ …অনেকটা যেন আবীরের অল্পবয়সের চেহেরার মত… ‘কে ও’!!! ধীরে ধীরে চোখটা আরও একটু খুলল মোহনা …ওহ্ , ও যে আয়ান।এমন অচেনা লাগছে কেন? মুখটা কেমন ফ্যাকাশে করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ানের পিছনে মোহনার দাদা মল্লার। আর সেই অপরিচিত কণ্ঠস্বরের মানুষটি, আর কেউ নন, ডঃ পরেশ গুপ্ত। ডঃ গুপ্ত বললেন, ‘দেখি একটু জিভটা দেখান তো ?’ মোহনা কেমন যেন যন্ত্রচালিতের মত জিভটা বের করে ফেলল…। ডাক্তার বললেন ‘ বেশ বেশ। কি চিনতে পারছেন ছেলেকে?’ ঈষৎ ঘাড় নাড়ল মোহনা। আয়ান বলল … ‘মা তুমি ঠিক আছো তো?’ মোহনা নিজের ডান হাতটা বাড়িয়ে আয়ানকে ছুঁতে চাইল … আয়ান মায়ের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে নিল, বলল … ‘ডোন্ট ওয়ারি মা সব ঠিক আছে ’ …একটু হাসতে চেষ্টা করল মোহনা….. চোখটা আবার কেমন ঝাপসা হয়ে গেল… কোথাও যেন একটা ব্যথার অনুভুতি , গলাটা শুকনো লাগছে … চোখের পাতাটা কেমন ভারী ভারী ঠেকছে…চোখটা আবার বুজে গেল মোহনার… একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল চোখের কোণা দিয়ে… । ডঃ গুপ্ত বললেন,
-‘ব্যস ব্যস আর চিন্তার কিছু নেই……এবার ঘুমোন …
-ডঃ আঙ্কেল মায়ের সেন্সেটা আবার চলে গেল কেন?
– ওটা তো হবেই , এখনও অ্যানাস্থেসিয়ার ঘোরটা কাটে নি তো তাই…চলো আমরা বাইরে যাই …মোহনাকে রেস্ট করতে দাও…
মল্লার বলল ‘ভয়ের কিছু নেই তো?’
-আরে না না …ভয়ের কারণটা কাটাতেই তো এত কিছু। বাই দ্য ওয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে চেম্বারে আসছি…আপনারা ওখানেই আসুন।
মল্লার আর আয়ান মোহনার সামনে আরেকটু দাঁড়িয়ে রইল…সিস্টার বললেন, ‘ প্লিজ আপনারা এবার বাইরে যান…।’ ওরা নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল । মোহানার দুচোখ জুড়ে তখন ঘুমের ঝাঁপি … চেষ্টা করেও চোখ খুলে রাখতে পারলো না । এত ঘুম যে তার কোথায় ছিল কে জানে! …আজ কত বছর হয়ে গেল মোহনার চোখে নিশ্চিন্ত ঘুম নেই…আছে শুধু সময়ের সাথে সাথে অনন্ত পথ চলা… আর অলীক নিয়মের এক বেড়াজাল…।এই ক’বছরে আয়ানকে নিয়ে একা এগিয়ে চলাটাই কেমন যেন অভ্যেস হয়ে গেছে মোহানার । ..স্কুলের চাকরী আর আয়ানকে বড়ো করে তোলার অদম্য ইচ্ছেই নিজেকে একটুও থেমে থাকতে দেয় নি সে…বাড়ির সবাই বলত ‘অনেক তো হল মোহনা, আয়ানকে একটা হোস্টেলে দিয়ে একটু কি নিজের মত করে শ্বাস নেওয়া যায় না? …তোর নিজেরও তো একটা জীবন আছে ।’ ‘না যায় না…আয়ানকে বাদ দিয়ে আমার আবার নিজের জীবন কি?’… মোহানা কারোর কথা কানে তোলেনি …কেমন যেন নেশার মত ছুটে চলেছে নিজের অন্তহীন এক লক্ষ্যে… বাঁধা পড়ে গেছে একঘেঁয়ে এক রোজনামচায় । আর সময় বয়ে গেছে তার নিজের তাগিদে।
……………………………………………………………………………………………………ক্রমশ