#মনমাঝির_প্রথম_পাঠ_প্রতিক্রিয়া

#প্রকাশক_অভিষেক_আইচের_কলমে

এ এক অদ্ভুত উপলব্ধি!!!

আসন্ন কলকাতা বইমেলা ২০১৯ এ প্রকাশিতব্য আমার প্রথম উপন্যাস ‘মনমাঝি’ সম্পর্কে প্রকাশক ‘দ্য কাফে টেবিলে’র উপস্থাপনা –

‘দ্য কাফে টেবিলে’র অফিশিয়াল পেজের “কেন কিনবেন” শীর্ষক রচনা থেকে সংগৃহীত অংশবিশেষ_______

*******************************
….

#মনমাঝিঃঐন্দ্রিলা_মুখোপাধ্যায়।

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ‘ঐ মুখ’ নামের ওয়েবসাইটে নিজের লেখালিখিতে নিমগ্ন তিনি। হঠাৎ নজর পড়ে আমাদের। একটি উপন্যাসকে ঘিরে পাঠকদের মধ্যে আমরা দেখতে পাই ঔৎসুক্য। ওয়েবসাইটের পাঠকেরা চাইছিলেন বিষয়টি গ্রন্থাকারে প্রকাশ হোক। বিগত দেড় বছর ধরে উপন্যাসকে পরিমার্জনা করলেন ঐন্দ্রিলা। জন্ম হল নতুন এক উপন্যাসের। চিরপ্রণম্য বুদ্ধদেব গুহ-র সার্থক উত্তরসূরি ঐন্দ্রিলা। কেন এত বড় কথাটা বলা হল, একটু আভাস থাকল এখানে—

প্রকৃতি আর প্রেম চিরকাল আবিষ্ট করে রাখে আমাদের জীবন, আমাদের যাপন। মনের অন্ত্যমিলে নিরন্তর জারি থাকে সমকালীন এক খোঁজ!
কলকাতার মেয়ে শিমুল এক বসন্তের সকালে পা রেখেছিল অরণ্যসুন্দরী ঝাড়গ্রামে রাঙাপিসির বাড়িতে। সেখানকার মোহময়ী প্রকৃতির ছোঁয়ায়, ষোড়শী শিমুলের শরীরে-মনে ছড়িয়ে পড়েছিল ফাগুনের আগুন। তবে সত্যি বলতে ঝাড়গ্রাম তাকে প্রেম দিয়েছিল যেমন অকাতরে, তেমনি তার সেই ভালোবাসার নেশায় মাখিয়ে দিয়েছিল একরাশ বিষাদ। একসময় জীবন বাঁক নিয়েছিল নতুন খাতে। সেদিনের সেই কিশোরী শিমুল ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিল বাসন্তীর এক গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষিকা। যার অনুভবে শুধুই নেশাতুর সবুজের হাতছানি আর গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করতে চাওয়ার বাসনা। কিন্তু যে শিমূল জঙ্গল ভালোবাসে, নদী ভালোবাসে, মেঠো সুর ভালোবাসে, হঠাৎ কোন সে অভিমান তাকে তার এমন সহজিয়া জীবন ছেড়ে নিয়ে যেতে চাইছিল বিদেশের ঝাঁ চকচকে শহুরে কেতার আপোষের জীবনে? সে কি বিদেশের প্রতি আকর্ষণ নাকি নির্বাসন? ঝাড়গ্রামের পলাশের গৈরিক রঙ -এর মাঝে সে কি খুঁজেছিল শেষমেশ , ভালোবাসার আগুন নাকি বৈরাগ্যের ছোঁয়া??একদিকে শিমুলের ভালোলাগা-অপেক্ষা-স্বপ্ন আর অন্যদিকে তার আপোষ-অভিমান-লড়াই, মূলত তার ভালোবাসার একাল আর সেকাল, তার জীবন নদীর দুই পাড়ের টানাপোড়েনে তার মন রূপ মাঝি বেছে নেবে কোন সে পথ? যা সমকালীন হয়েও চিরকালীন!!

প্রকৃতির বুকে এ এক অন্যধারার প্রেমজ উপাখ্যান।
……

****************************
Thanks to ‘The Cafe Table’

লিংকঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2048653371895455&id=100002524379244

  

 

…স্বাধীনতা মানে যতটা নিজে স্বাধীন থাকা তার চেয়েও বেশি বোধহয় অন্যের শৃঙ্খল মোচন করা …সেই অর্থে দেখতে গেলে স্বাধীনতা মানে নিজের সাথে সাথে অন্যের পরাধীনতা মোচন …এটা একটা প্রক্রিয়াকরণ…আমাদের মনে ও বাইরে বেড়ে ওঠে দুটি ভিন্ন জগত….একটি খাঁচার ভেতরর আমি , অন্যটি খাঁচার বাইরের আমি…খাঁচার ভেতরে যে আমি তার সামনে দুটি পথ …কারণ খাঁচার দ্বার তো খোলা… তুমি চাইলে উড়তে পারো কিংবা নয় কিন্তু আমাদের ওড়বার শিক্ষা নেই…সাধ আছে ভরপুর কিন্তু সাধ্যের ভাঁড়ারে রত্ন কই? অশিক্ষা, কুশিক্ষার কুঠুরিতে আলোর অভাবে যে গুমোট তৈরি হয় তাকে সরিয়ে আলোর উৎসমুখ বয়ে আনতে একালের তাবড় তাবড় মানুষরা শুধু স্বাধীনতার বুলিই কপচিয়ে জান …। কিন্তু মনের স্বাধীনতা তাতে ধরা দেয় কি…???? স্বাধীনতা মানে তো স্বেচ্ছাচারিতা নয়…। স্বাধীনতা মানে পাশ্চাত্যের আলোয় ভাষা শিক্ষাও নয়…এমনকি মনের কষ্ঠিপাথরে নিজেদের না পাওয়ার ব্যথাগুলো থেকে জ্বলে ওঠা বিদ্বেষও নয়…। মুলত স্বাধীনতা একটি সত্যের ধাঁধা । …স্পর্ধার বিকল্প স্রোত …ইচ্ছার মুক্ত ফল…। এ এক অবাক নদীর জল…যে বহমান জলধারা কেবল বয়ে চলে আর কানের পাশে রবি ঠকুরের সুর তুলে … ‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয় / অসংখ্য বন্ধনমাঝে মহানন্দময় , লভিব মুক্তির স্বাদ।’

______________________________________________________________________________________

  

 

10384305_682403161849928_6394064457122891236_n

oimookh/ @indrila

জীবনে যতটা আঁধার দেখে আমরা কষ্ট পাই ,তার চেয়েও কিন্তু অজানা অন্ধকার আরও আরও বেশি বিরহের …’যখন বিষন্নতা ঝরে পড়ে কালোজামের মত ‘…………’আম কাঁঠালের মত বার্ধ্যকেরও একটা ঋতু আছে’….যা প্রকৃতির এমনএক পরিপূর্ণ পরিস্ফুট ফল, যা বৃন্তচ্যুত হওয়ার জন্যে অপেক্ষমান……হ্যাঁ বার্ধক্য-জরা-ব্যাধি-মৃৃত্যু…… আর মৃৃত্যুর সেই অমানিশা পেরিয়ে কোন সে দেবদূত আমাদের ইহলোকে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন আজ পর্যন্ত ??
…………’আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু ,বিরহ দহন লাগে/তবুও শান্তি ,তবু আনন্দ,তবু অনন্ত জাগে’…..তোমার সৃষ্টির জন্ম লগ্নে আমি ছিলাম না এ যেমন সত্য …..তেমনি সত্য ,কাছের মানুষকে হারানোর ব্যথার মতই তোমার না থাকা আজও বড়ো ভারবাহী আমার কাছে…..মৃত্যু মানুষের জীবনে নির্মম সত্য ….যা ছিলো আর যা নেই..এই দুয়ের মাঝে যোগসাধনের একটাই শব্দ মৃত্যু ।যখনই কোনো মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছি বা শুনেছি একটাই চরম অনুভূতি মনের মাঝে ঝড় তুলেছে ….শূন্যতা………সেই নিশ্চিত বিরহদহনকে তুমি শব্দান্তরিত করেছ ‘নাই অন্ধকারের বেড়া’ বলে….শূন্যতাকে মানুষ কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চায় না…..অথচ যা নেই…ভাবছি আছে…..তা তো অলীক….মিথ্যে….তবু আমরা সবাই মরীচিকার মত যা দেখা যায় না,তাই দেখতে চেষ্টা করি….যা পাওয়া যাই না ,তাই পেতে চেষ্টা করি ….যা ছোঁয়া যায় না ,তাই ছুঁয়ে দেখতে চাই…..আর এই অসম্ভব সত্য মিথ্যার দ্বন্দ্বে আসে বৈরাগ্য….নিস্পৃহতা…..নিরাসক্ত এক উপলব্ধি …যা তোমাকে শিখিয়েছিল…’জগৎকে সম্পূর্ণ ও সুন্দর করে দেখবার জন্যে দূরত্বে র প্রয়োজন ,আর সেই দূরত্বের নাম ই মৃত্যু!!!!!’……বৈরাগ্যের কৃচ্ছসাধনই মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়…..সত্যকে সহজে মেনে নেওয়ার শক্তি দেয় …..এ যেন এক ছুটির সুর…..লৌকিকতার দায় সহ্য করে পারলৌকিক ক্রিয়া যে অতীন্দ্রিয় স্বর্গ সুখের প্রশান্তি মনকে দান করে….তাই বোধহয় মানুষকে সত্য উপলব্ধির পথ বাতলে দেয়…. ।
……..তোমার পারের যাত্রা তুমি কবেই শেষ করে গেছ…..কী রেখ গেছ তার ইতিহাস আজও আমরা খুঁজে বেড়াই….তোমার অকৃত্রিম সাধনা আজও আমাদের প্রাণে নতুন উষার ইঙ্গিত বয়ে আনে যার জেরে আজও আমার মত অসংখ্য মানুষের হাসি কান্না সুখ দুঃখ তোমার মাঝে সমাহিত…..যে বিপুল বিস্তার তোমার সৃষ্টি তে উদ্ভাসিত আমি নিতান্তই এক অর্বাচীন , কতটুকুই বা তার খোঁজ রাখি ,তবু যেন মনে হয় জীবনের প্রতিটি অনুভবের সারাৎসার তোমার সৃষ্টির মাঝেই বিলীন ।তাই মনে হয় জীবনের যে গভীরবোধ সেই ছেলেবেলা থেকে অস্থি মজ্জা রক্তে মাংসে মিশে আছে কী তার উৎস….কী তার তাৎপর্য..কোন সেই দেবকান্তি ঐশ্বরিক অস্তিত্ব ….যার প্রয়াণে আপামর জনসাধারণ এখনও মনখারাপের ভেলায় ভেসে যায় আজকের দিনে …..?….বাঙালীর আঙিনায় কোন সে মহাপ্রস্থান…যা শ্রাবনের বিরহঘন আকাশ থেকে তোমার তরে ডাক পাঠিয়েছিল ,যার অমোঘবাণী তুমিও ফেলতে পারো নি ?…তোমার ঐ সৃষ্টিতে কি সেই টান আজও বলবৎ আছে যার জোরে প্রকৃতির সকল রূপমাধুরী আজ বড়ো নিশ্চুপ….? তোমার নামের আড়ালে কি সেই নৈঃশব্দ যা আজও আমাদের নির্বাক করে তোলে ……???
…..পরিশেষে এইটুকু বলি….তোমার পরিচয়ের পরিনাম আমাদের দিয়েছে অনাদিকালের এক অনাহতবাণী…..যা ধ্বনিত হয়েছে অনন্তকালের অভিমুখে….আর তোমার সেই বিশ্ববাণীর সারবত্তা হল……’আনন্দ করো তাই নিয়ে ,যা তোমার কাছে সহজে এসেছে….যা রয়েছে ….তোমার চারিদিকে তার মধ্যেই তোমার চিরন্তন সত্যের খোঁজ ‘…….. ।

‘নাহি ক্ষয় ,নাহি শেষ, নাহি নাহি দৈন্যলেশ…..
সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে ॥’

_____________________________________________________________________________________________________/২২শে শ্রাবন, ১৪২১

  


 বদলে যাচ্ছে আমার দেখা সময়টা । বদলে যাচ্ছে এই শহর….তার অতীতের ঐতিহ্য… তার   কেতাদুরস্ত হাবভাব….স্বভাব । ভয়ংকর গতিতে ছুটে চলেছে আমার চারপাশের পৃথিবীটা ….কর্মব্যস্ত মুখর পল অনুপল…দন্ডপল । চারদিকে ডাকাডাকি …হাঁকাহাঁকি …গাড়ির ক্র্যাকাফোনি । অহর্নিশ সবাই চলমান উথালপাতাল মত্তমাতাল। আমার ভিতরে ও বাইরে সর্বত্রই চলছে এক স্থাপত্যের নির্মাণকার্য ….বিড়লা পিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা আজ আর নেই…..ক্যাথিড্রাল চার্চের পাঁচিল ধরে টেরাকোটা ফ্লোরটালির রাস্তায় হাঁটা জগৎটা আজ কত আলাদা !!!…….গভীর রাতে যখন ভবিষ্যৎ তার ভাবনা ভাবায় ….অতল ঘুমে যখন অতীত হাতছানি দেয়….আর বারবার তুমি আমার কানের পাশে পাবলো নেরুদার কবিতা শোনাও…..আমি পিছিয়ে যাই একলাফে একযুগ…..আগামীআর বর্তমানের সব গভীরতার রেশ ছিঁড়ে….আজ আরও একবার আমি ফিরে দেখছিলাম সেই বিস্তৃত স্থির জল….পাশে হলুদ বসন্তের মত রাধাচূড়ার আন্দোলন…..দুচোখে নীরব বিস্তার …..একা একা …ফিরে দেখা । বেশ লাগে যখন ভাবনা গুলো ছুটি নেয়….আর আমি শব্দকোষ শিকেয় তুলে বেকার হয়ে পড়ি….ভালোবাসার কোনো দায়ভার নেই…..নেই কোনো পিছুটান….কোনো আয়োজন কিংবা প্রয়োজন ….শব্দ প্রসবের কোনো দায় নেই…..অসমাপ্ত কবিতার পূর্ণতা প্রাপ্তির তাগিদও নেই আজ… । জীবন ভালোবাসাময়…ভালোবাসার গভীরতা কখনও বাড়ে কখনও কমে….যার কাছে আজ আমি খুব গুরুত্ব পূর্ণ ….জানি কাল সেই টান ফিকে থেকে আরও ফিকেতর হয়ে যাবে….. ।…..রবীন্দ্রসদন থেকে দ্বিতীয় হুগলী সেতু….কতটুকুই বা দূরত্ব । গাড়ী ছুটে চলেছে ব্রিজের ওপর….চোখের সামনে সরে সরে যাচ্ছে জলছবি….যেন অতীত আর বর্তমানের মুহুর্তের কোলাজ…..প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগছে শরীরে ….মনে ।এ যেন মাধ্যাকর্ষণের বাইরে চলতে চাইছে….প্রবল ভাইব্রেশনে পাঁচটা পাঁচটা, দশটা স্পিড ব্রেকার পেরিয়ে গাড়ীর গতি শ্লথ হয়ে এল । আমার গন্তব্যে এসে থামলাম…..যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম …ফিরে এলাম সেখানেই….একলাফে একযুগ পেরিয়ে এলাম়……॥ বিজ্ঞান বলে বস্তু বা ব্যক্তির প্রথম ও শেষ যাত্রাবিন্দু মিলে গেলে সরণ শূন্য ….অর্থাৎ যাত্রা শূন্য …..তাই বোধ করি আমি আমার মধ্যেই রয়ে গেলাম….আর আমার মনটা বোধহয় স্বপ্নে পাড়ি দিয়ে যা চাইত তার স্বাদ নিয়ে এল জীবনের বাকি কটা দিনের বাঁচার রসদ হিসাবে ………!!!!!!

August 23, 2013 at 1:40pm *@indrila*

  
কথার ওপর কেবল কথা @Oindrila

কথার ওপর কেবল কথা @Oindrila

আজকের সকালটা আর পাঁচটা সকালের থেকে একেবারে অন্যরকম । বলা ভালো ভীষণ ভীষণ মনখারাপের । গতকাল আমাদের স্কুলের রি-ইউনিয়ন ছিল ,অনেকের সাথে দেখা হল যদিও আমাদের ব্যাচের সেরকম কাউকে চোখেই পড়ল না….তবুও বড় ছোটো সবার মাঝে নিজেকে একা মনে হয়নি। এই স্কুলের ব্যাপারে আমার একটি অভিমান আজও মনের মধ্যে জমা হয়ে আছে….উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলে থার্ড হওয়া আর অঙ্কে হায়েস্ট স্কোর পাওয়া সত্ত্বেও স্কুল থেকে প্রাইজ ডিস্ট্রিবিশনে আমার কেন কোনো ডাক আসে নি….সে প্রশ্ন আজও মনকে কিঞ্চিৎ কষ্ট দেয় বইকি! সারাজীবনে স্কুলে অনেক প্রাইজ পেয়েছিলাম , সর্বোপরি স্কুলের সব বিষয়ে মাথা গলানো মেয়েদের মধ্যে আমিও পড়তাম….তাই আমার নামের পরিচিতির মোহ আমাকে কোনোদিন খ্যাতির কাঙাল করে তোলে নি। এই স্কুলই কিন্তু আমাকে শিখিয়েছে ‘তোমার বাইরের আমিত্বের বাইরেও তোমার একটা ভেতরের আমি আছে যার কাছে ষোলো আনা সৎ থাকাটা জরুরী ।’ ছোটোবেলা থেকেই আমি লক্ষ্য করেছি আমার ভালোবাসার বিষয়গুলো বড় তাৎক্ষণিক আর ক্ষণস্থায়ী…তবুও যখন যা আগলাতে গেছি তাই হারিয়ে গেছে….তাই আমার অ্যাটাচমেন্টে বড় ভয়…জীবনের প্রতিটি বাঁকে এসে আজ আমি নিজেই এড়িয়ে চলি সমস্ত রকম মোহ…হারিয়ে ফেলার ভয়ে আমার ভালোবাসার বেষ্টনী থেকে নিজেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখি। এতে আমার কম কষ্ট হয় না ,তবুও সে কষ্ট ….হারিয়ে ফেলার কষ্ট থেকে একধাপ কম।তাই আমি অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করি ‘ ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র জীবনবোধে।তবু তো অতি সামান্য এক মানুষ ,তাই মাঝে মাঝে ভেসেও যাই ।ঠিক যেমন কাল আপ্লুত হয়ে যাচ্ছিলাম প্রাক্তন দিদিমণিদের মাথায় হাত রাখায়।তাই ধীর পায়ে অপরাহ্নের আলোয় ফিরে দেখতে চাইলাম আমার স্কুলকে ,যার সাথে আমার সেই ছেলেবেলার বারো বছরের সখ্যতা।
আজকের এই স্কুল আমাদের কাছে অনেকটা অপরিচিত । নতুন স্কুলবাড়ী ,নতুন ঝাঁ চকচকে টিচারস রুম, আমাদের সময়কার সেই আলো আঁধারী ঘরটাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল….তাই আমি আর আমার ক্যামেরা হাঁৎড়ে বেড়াচ্ছিলাম আমার পুরোনো শৈশব ও কৈশোরকে….খুঁজে খুঁজে এলাম পুরোনো স্কুলবাড়িতে ….সেই সিঁড়ি ,সেই অফিসঘর ,সেই ক্লাস রুম….চোখের সামনে এক একবার ভেসে উঠছিল ছোটো ছোটো মেয়ে ভরতি ক্লাস…..কানের কাছে বেজে উঠছিল হৈ হৈ শব্দ ,ছুটির ঘন্টা,ক্লাসে ক্লাসে দিদিমণিদের পড়ানোর শব্দ…আবার যেন পলকে চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল।আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ঘাঁটছিলাম আমার অতীত, ছুঁতে চাইছিলাম সেইসব স্মৃতি ….বুক ভরে নিতে চাইছিলাম পুরোনো চেনা গন্ধ ….পরিচিত স্বস্তির পরিবেশ….এইভাবে আরও এগিয়ে গেলাম আমার সেই কাঙ্খিত স্হানে …..মনের অবচেতনে যেখানে কত সুখদুঃখের নথি রেখে এসেছিলাম ….কাঁঠালগাছ আর তার নীচের বাঁধানো বেদী, যার নীচে বসে আমরা টিফিন খেতাম, কুমীরডাঙ্গা খেলতাম , মা যখন ছুটির পর আনতে আসতো লুকিয়ে থাকতাম তার আড়ালে, বন্ধুর সাথে আড়ি হয়ে গেলে একা একা যেখানে ইঁটের টুকরো দিয়ে কাটাকুটি খেলতাম….কিন্তু কই?…কোথায় সে জায়গা ?….খুঁজে না পেয়ে একটি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম….’কাঁঠাল তলাটা কোথা দিয়ে যাব রে ?’ …..সে বলল ‘কাঁঠাল গাছ কোথায় এখন….ওইখানেই তো আমাদের টিচারস রুম’….হা কপাল…নেই সেই কাঁঠালতলা? নেই সেই কাঁঠাল গাছ ? ….আমি তো তারই টানে ছুটে এসেছিলাম আজ আমার ক্যামেরা নিয়ে ….কেমন যেন স্বজন হারানোর ব্যথায় মনটা মোচড় দিয়ে উঠল।…..আমার অতীতের অনেক প্রিয় মানুষ, আমার মা, বাবা ,দিদান, বাংলার দিদিমনি প্রীতিকণাদি ,কাশীনাথ স্যারের মতো কাঁঠাল গাছটাও আজ আর নেই…..।মনে পড়ে প্রতিবছর পিকনিকে মাংস ভাতের আগে এঁচোড়ের ডালনা হতোই হতো, এযে আমাদের স্কুলের গাছের ফল, দুপুরবেলা বেঞ্চে মাথা রেখে ক্লাসের জানলা দিয়ে যার ডালে কাঠবেড়ালির ছুটে বেড়ানো দেখতাম, যে গাছের গোড়ায় একবার আমি কুড়িয়ে পাওয়া একটা দু-টাকার কয়েন মাটি চাপা দিয়ে রেখে বলেছিলাম “ এটা আমার পাওয়া টাকা …তোমার কাছে জমা রাখ , যদি কেউ না নেয় আমি দরকার পড়লে বার করে নেব।” আরও একবার দিদিমনির বকা খেয়ে এই গাছেরই নিচে দাঁড়িয়ে জানতে চেয়েছিলাম আমার অপরাধ কি? সেদিন হয়ত সে তার নিরপেক্ষ জবাব জানাতে পারে নি কিন্তু পরম মমতায় নিঃশব্দে আমার চোখের জলের সাক্ষী থেকেছে ।এই গাছ যেমন স্কুলের প্রাণকেন্দ্র ছিল , তেমনই আমার জীবনে যে কত বড় বন্ধু ছিল তা কেবল আমিই জানি । এমনই আমার আনন্দ, অভিমান,রাগ,ঝগড়া….কত অমূল্য স্মৃতির সাক্ষ্য বহনকারী সেই কাঁঠালগাছের কোনো ছবিও তো আমার কাছে নেই….যা দেখে কিছু দন্ড পল অনুপল আমি সুখানুভূতি নিতে পারি….রয়ে গেছে শুধু কালো কফিনে ঢাকা স্মৃতির অবগুন্ঠন।সবার অলক্ষ্যে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে গেল ওই নতুন টিচারস রুমের সামনে।শুনতে অবাক লাগলেও একথা সত্যি ,এই স্কুল আর ওই কাঁঠালতলা আমার জীবনে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে….এই স্কুল যতটা আজকের পড়ুয়াদের ঠিক ততটাই আমার ….শুধু কিছু সিনিয়রেরা অতীত আঁকড়ানোর সাহস নিয়ে আধিপত্য দেখাতে পারে কিন্তু সেই সাহস আমার মধ্যে নেই….কারণ এই স্কুলই যে আমাকে শিখিয়েছে কোনোকিছুই আমার নয়….আমি বলে এখানে কিছু হয় না…..।তাই আজকে নিজেকে এই স্কুলের অংশ ভাবতে চেষ্টা করেও যেন আটকে গেলাম, হেরে গেলাম, ওই একাধিপত্যের কাছে….যাক সে কথা।কিন্তু সত্যি বলতে কাঁঠাল তলা হারিয়ে যাওয়ার সেন্টিমেন্টটা আমার সারা জীবনে পাওয়া দুঃখগুলোর মধ্যে অন্যতম।
……….আমার মেয়ের স্কুলেও একটি বাঁধানো আমগাছের বেদী আছে।আমি সচরাচর মেয়ের স্কুলে যাই না ,কিন্তু যখনই যাই একবার ঘুরে আসি সেই জায়গা থেকে।অপলকে তাকিয়ে দেখি….অগোচরে চেনা সুবাস পাই আমার মেয়েবেলার।এই আমগাছটিও কিন্তু আমার অনেক সুখদুঃখের সাক্ষী ।প্রতিবার মেয়ের সাফল্য যেমন ভাগ করে আসি তেমনি স্কুলের সিস্টেমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও আওড়ে আসি অভিমানের গলায়….আর মনে মনে বলি….এই যেমনটি তুমি ,তেমনটি আছে আমার এক কাঁঠাল গাছ!!!!…..কিন্তু না আজ আর সে নেই….আজ সে অতীত….সময়ের করাল গ্রাস আমাদের বহুদিনের এই সখ্যতাকে সমূলে উৎপাটন করেছে……সময়ের উন্নতির হাত ধরে বদলে গেছে আমার চারপাশ…..কিন্তু কেমন করে বলবো যে, আজও আমি সেই স্কুল পড়ুয়া মেয়েটার মতোই আকাশ দেখি, পা ফেলতে চাই সবুজ ঘাসে….আঁকড়ে থাকতে চাই আমার হারানো সময়….. কারণ মনের অগোচরে আমি যে আজও পারিনি নিজেকে বদলাতে……..।

  
PAGE TOP
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com
Copy Protected by Chetans WP-Copyprotect.
Skip to toolbar