Platform no. 13/@indrila/oimookh.com

Platform no. 13/@indrila/oimookh.com

পর্ব -১ _____________________________________________________

ঘুম ঘুম চোখে ঘড়িতে কটা বাজে ঠিক ঠাওর করতে পারা যাচ্ছিল না। জানলার বাইরেটা আজ বড়ো মেঘলা। আকাশটা কেমন যেন ঘন কালো হয়ে আছে। বাজে কটা? বিছানার পাশের সাইড টেবিল থেকে মোবাইল ফোনটা তুলে নিয়ে অনীশ দেখল ঘড়ি বলছে সাড়ে ছ’টা।
……ভীষণ রকম একটা আলসেমী কাজ করছে আজ অনীশের মধ্যে …জানলার পর্দাটা হাওয়ায় সরে গেছে একফালি…আর সেখান দিয়েই বাইরের আকাশটাকে একচিলতে দেখা যাচ্ছে । জানলার পাশের সুপারি গাছগুলো বেশ বৃষ্টিস্নাত। ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। অনীশ কিছুক্ষন একদৃষ্টে বাইরের দিকে চেয়ে রইল…তারপর গায়ের চাদরটা বেশ ভালো করে মুড়ি দিয়ে মুখ ঢেকে উল্টোদিকে ফিরে শুলো। পৃথার মাথার বালিশটা একটু একপেশে হয়ে আছে। গায়ের চাদরটা নিচের দিকে আলগোছে জট পাকিয়ে পড়ে আছে। …অনীশের পাশের জায়গাটা পৃথার । কিন্তু এখন সেটা ফাঁকা …পৃথা ঘুম থেকে উঠে পরেছে অনেক্ষন। অনীশ পৃথার বালিশটাকে দুহাতের মধ্যে আঁকড়ে ধরে চেপেচুপে শুয়ে রইল। গত রাতের তীব্র জৈবিক চাওয়াগুলোর আবেশ এখনও বুঝি তার শরীরে রয়ে গেছে সমমাত্রায়। তার খালি গায়ে আর চওড়া কাঁধে এখনও পৃথার কপালের সিঁদূরের লাল দাগ লেগে আছে কোথাও কোথাও। প্রতিটা মানুষেরই নির্দিষ্ট একটা গায়ের গন্ধ থাকে। পৃথার বালিশেও তেমনি গত রাতের আদুরে গন্ধটা মাখা হয়ে আছে। অনীশ পৃথার বালিশে নাক লাগিয়ে সেই আঘ্রানটাই পেতে চেষ্টা করছিল… হঠাৎ একটা ফুটবল এসে পড়ল অনীশের কোলের কাছে। চাদর থেকে মুখ বার করে সে তাকিয়ে দেখল …পেলে…তার চার বছরের ছেলে…ভাল নাম আলাপন।
-গুড মর্নিং বাবাই।
-মর্নিং বেটা। তুমি স্কুলে যাবে না ?
-না …বাইরে জল জমে গেছে…মা বলেছে আজ রেনি ডে। তাই দাদাই বলেছে আজ খিচুড়ি ইলিশমাছ ভাজা।
-বাব্বা সকাল হতে না হতেই দুপুরের খাওয়ার প্ল্যানিং রেডি…হি ইস গ্রেট।
কিন্তু তার আগে আরেকটু ঘুমবি আয় দেখি…
পেলে গুটি গুটি খাটে উঠছিল বলটা নেবে বলে … কিন্তু অনীশ পেলেকে জাপটে ধরে কাছে টেনে জড়ামড়ি করে চাদরে ঢুকিয়ে নিতে চেষ্টা করল। আর পেলে যেন ছাড়া পেতে পারলে বাঁচে ।
“উফফ উফফ” … হাঁসফাঁস করে উঠল পেলে…
এমন সময় পৃথার ডাক পাওয়া গেল, ঘরের বাইরে থেকে… “পেলে টুথব্রাশটা আবার কোথায় রাখলি?”
-চুপ চুপ…বাবাই …মামমাম আসছে।
-তবে আয়, চাদরের ভেতরে লুকোবি আয়।
…কয়েক মুহুর্ত শুধুই গরম শ্বাস-প্রশ্বাসের আদানপ্রদান চাদরের ভেতর , পেলে আর অনীশের। পৃথা ঘরে এসে একবার দরজার পিছনে , একবার আলমারীর পাশে , একবার খাটের নিচে খুঁজে বলল …
-ওমা কোথায় গেল ?এইতো দেখলাম এই ঘরে ঢুকল ফুটবল নিয়ে!
তারপর বিছানায় চাদরের মধ্যে একটা নড়াচড়া দেখে আর ফিসফাস শব্দ শুনে , পৃথা একটু মুখ টিপে হেসে মজা করে বলল …
-ওহো কোথায় গেল দুষ্টুটা ?…আমি তো খুঁজেই পাচ্ছিনা!…তাহলে নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে…আর আমি তো জানি ঘুমলে পেলের পা নড়ে……কই দেখি পাটা কি নড়ছে চাদরের ভেতর?…এই বলে যেই না পৃথা চাদরটা তুলে দিয়েছে অমনি একটা খিল খিল হাসি। আর পেলে লাফিয়ে উঠে তার কচি কচি হাত দুটো দিয়ে পৃথার গলাটা জড়িয়ে ধরল। তারপর মা ছেলের সে এক খুনসুটি। অবশেষে পেলে তার মায়ের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ফুটবল নিয়ে লাফঝাঁপ করে ঘর থেকে পালিয়ে গেল।
…অনীশের বেশ লাগে পৃথা আর পেলের এই ছোট্ট ছোট্ট খেলাগুলো।অনীশ বলল…
-দিলে তো …মা ছেলে মিলে আমার ঘুমটার বারোটা বাজিয়ে!
-আর কত ঘুমবে ? ওঠো এবার। সাতটা বাজে।
-কি হয়েছে? আজ তো রেনি ডে ।
-সেকি তোমারও রেনি ডে?
-ওঠো ওঠো…আমি বিছানা গুছোব তো?
-বাহ রে, শুধু ছোটো ছেলেটার সাথেই যত খুনসুটি …বড়ো ছেলেটা যে কখন থেকে দেখছে এসব …তাকে চোখেই পড়ছে না তোমার।
-যাহ …একবারে যা-তা…কি হয়েছে তোমার? ওঠো বলছি …একটু বাজারে যাও না …ইলিশ মাছ পেলে নিয়ে এস …বাবা বলছিলেন আজ খিচুড়ি আর ইলিশমাছ ভাজা করতে দুপুরে।
-হেড অফিসের অর্ডার যখন…কিছু করার নেই, উঠতেই হবে। কিন্তু এমনি এমনিই উঠব? কিছু দেবে না তাহলে?
আপাত রাগে পৃথা তার মাথার বালিশটা ছুঁড়ে বলল… “না দেব না কিছু…। তুমি উঠবে নাকি? মাকে ডাকব এবার?”
-উঠছি বাবা…উঠছি…
অনীশ জানে মা আসলেই আরেক বিপদ…একথা সেকথা …তারপরই জুড়ে দেবে ছোটোবেলার কথা…। অগত্যা বিছানা ছেড়ে উঠতেই হল অনীশকে। গায়ের চাদরটা সরাতেই সিঁদুরের লাল দাগগুলো দেখে পৃথা বলে উঠল ,
“ এই … তুমি এখনও খালি গায়ে আছো ?…মা দেখলে কি ভাববেন …নাও এটা পর”… বিছানার নিচে রাখা গোল গলা সাদা টিশার্টটা পৃথা ছুঁড়ে দিল অনীশের দিকে। জামাটা লুফে নিয়ে একটু ঝেড়ে, অনীশ অবলীলায় সোজা জামাটাকে আবার উল্টো করে পরে ফেলে বলল … “দেখলে আবার সেই উল্টো হয়ে গেল।”…পৃথা হেসে বলল “সাধে কি বলি তুমি এখনো বড়ই হও নি!!!”

………………………………………………………………………………….ক্রমশ

Series Navigationপ্ল্যাটফর্ম নম্বর তেরো/২ >>
© Copyright 2014 @indrila, All rights Reserved. Written For: Oimookh