কদিন হলো বাঁ পায়ে একটা ব্যথা হচ্ছে অহনার। গোড়ালিটা যেন ফেলতেই পারছে না।…এমন হলে তো মহা মুশকিল!!! হাঁটাচলা করা দায়। কাজের তো আর শেষ নেই… রিমঝিমের টিউশন …ক্যারাটে ক্লাস….অ্যাবাকাস ট্রেনিং…নিজের অফিস… তারওপর তো আছেই টুকটাক ব্যাঙ্কে যাওয়া… এটা ওটা কেনাকাটা আর সারাদিনে কম করে হলেও সাত আটবার ওপর নীচ। হাউস ফিজিশিয়ান অলকেশদা বললেন…”ইউরিক অ্যসিডের লেভেলটা চেক করিয়ে নাও অহনা”….তাই আজ ঋদ্ধির পেড়াপেড়িতে অফিস ছুটি নিয়েছে অহনা ….রিমঝিমকে কম্পিউটার ক্লাসে ড্রপ করে এসে দুজনে এসে পৌঁছলো নিরীক্ষণে …ঋদ্ধিরই বন্ধু মৃণ্ময়ের ডাইগনিস্টিক সেন্টারে…. অহনার ব্লাড টেস্ট করাতে। আজ আকাশটা বড়ো বেশি মেঘলা….কেমন যেন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছিল আসার পথে…বর্ষা বুঝি চলে এলো! মৃণ্ময় ঋদ্ধিকে বললো ” ফাস্টিং এ ব্লাড টেস্ট করাবিই যখন ,একেবারে সুগার, টি এস এইচ…লিপিড প্রোফাইল সব কটা করিয়ে নে”…ঋদ্ধিও একমত…আজকাল সবাই একটু বেশিই হেলথ কনশাস। একটু সময় নিল মৃণ্ময়..আজ কালেকশানের ছেলেটা নেই….হাতের কাজ কটা গুছিয়ে নিল একটু…ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক কথা জুড়ে দিল অহনা…ততক্ষণে আকাশ সাজো সাজো হয়ে গেছে….বৃষ্টি এলো বলে….ঋদ্ধি বললো ” কুইক মৃণ্ময়…বৃষ্টি আসছে ভিজে যাব….”কিছু সময় পরে এক সিরিঞ্জ রক্ত টেনে নিয়ে অহনাকে ছেড়ে দিল মৃণ্ময়….বললো,”রিপোর্ট কাল পেয়ে যাবি।”
….নিরীক্ষণ থেকে বেরোতেই আকাশ গুড়গুড় করে উঠলো…ঝোড়ো হাওয়ায় চারপাশটা আবছা হয়ে গেল….ঋদ্ধি বাইকের চাবিতে হাত রেখেই বললো,
– বেডরুমের জানলা লাগানো তো?
-না তো? বুঝবো কি করে বৃষ্টি হবে!
-কেন? তুমি দেখলে তো আকাশ মেঘলা…
-সবসময় কি মেঘ করলেই বৃষ্টি হয়??…আচ্ছা বাবা ভুল হয়েছে ….কথা বাড়িও না … চলো তো।
-দেরি তো তুমি করলে মৃণ্ময়ের সাথে গল্প জুড়ে…নাও ওঠো ওঠো।
…. বাইক স্টার্ট নিয়ে বড়ো রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে ফ্লাইওভারে উঠতেই শুরু হল চিটির পিটির বৃষ্টি …ঋদ্ধি বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিল…. বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন পিনের মতো ফুটতে লাগলো অহনার শরীরের ফাঁকা অংশে ।অহনার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ঋদ্ধির কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে কোমর জড়িয়ে আরও কাছাকাছি বসতে ,আগের মতো….সেই আগের মতোই বৃষ্টির দিনগুলোতে একসাথে ভিজতে চাওয়ার ইচ্ছেয় গোটা কোলকাতা শহরের অলি গলিকে সাক্ষী রেখে ছুটে বেড়াতে…..আজও সেই মেঘ….সেই কালো আকাশ…সেই বৃষ্টি…. সেই বাইক….সেই ঋদ্ধি ….সেই অহনা ….শুধু মাঝে গড়িয়ে গেছে কয়েকটা বছর…আর সাথে সাথে বুঝি হারিয়ে গেছে সেই ফেলে আসা দুরন্ত বেপরোয়া ইচ্ছেগুলো!!! বৃষ্টির মধ্যেই ফ্লাইওভার থেকে দেখা যাচ্ছে দূরের আকাশ ছোঁয়া অফিস বিল্ডিং ….বড়ো বড়ো বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ….নীচে দিশেহারা লোকজন….অটোমেটিক রোড সিগন্যালে ফাঁকা হয়ে যাওয়া ক্রসিং … আর কানে আসছে ঋদ্ধির একরাশ বিরক্তির কথা…শ্লেষাত্মক বকুনির রেশ….তবু সবকিছুকে ছাপিয়ে অহনা ভীষণভাবে ঋদ্ধিকে বলতে চাইলো…”ক্ষতি কি আছে গো….একটু না হয় ভিজলোই তোমার বাড়ির খোলা দুয়ার উঠোন ….একটু না হয় হলোই আজ বৃষ্টি বৃষ্টি মন!!!”……..আজ কেমন একটা তীব্র হিংসে হলো তার ফেলে আসা অতীতটাকে …. দীর্ঘশ্বাসে জ্বালা করে উঠলো চোখের কোণদুটো….বৃষ্টির জলের আবেশ আর চোখের জলের আক্ষেপ মিলেমিশে কিছুই বলা হল না ঋদ্ধিকে শুধু আরও একবার মনের মাঝে গুনগুনিয়ে উঠলো রবি ঠাকুর….”তুই ফেলে এসেছিস কারে….মন ,মন রে আমার!!

© Copyright 2014 @indrila, All rights Reserved. Written For: Oimookh