পর্ব – ৫
মহুলের অবাধ্য মনের কারনে আজ রাংতার এক অসীম যন্ত্রনা মনের মাঝে সারাক্ষণ জুড়ে থাকে…কি এক অপরিসীম মোহ তাকে ছেঁটে ফেলতে দেয় না এই আগাছার মতো সম্পর্কটাকে……রাগ হয় অভিমান হয়…তবু সরে থাকতে পারে না এই খ্যাপা ছেলেটার পাশ থেকে…
-আজ তোর সাথে কোনও কথা হবে না, মহুল।
-কেন? এমন শাস্তি কেন?
-যা খুশি বল, আমি কথা বলবই না।
– অপরাধী জানলোই না কি বা তার অপরাধ!…অথচ মৃত্যুদন্ড হয়ে গেল। আরে বাবা, কারনটা তো বল…
-কত করে বলেছিলাম মহুল…আমার বাড়ি আসতে , সে যে আসবি না জানতাম। কিন্তু নিদেনপক্ষে একটা ফোন!…না তাও না…বুড়ো শিবঠাকুর হয়ে পুজো নিচ্ছিলি বুঝি কদিন ধরে?নন্দী ভৃঙ্গীর সাথে কোথায় ছিলি ধ্যানে মগ্ন? ফোনের ওপারে শুধু নিরাসক্ত একই বুলি “ দুঃখিত ,ডায়াল করা নম্বরটি এই মুহূর্তে পরিসেবা সীমার বাইরে…”। তোর মনে ছিল কি আমার জন্মদিনের কথা?কিছুই তো চাইনা মহুল…শুধু একটু কথা…তাও কি ভারী ঠেকেছিল সেদিন তোর?
-কি বলি বলতো রাংতা? মনে তো ছিল…ভেবেছিলামও অনেক কিছু, কিন্তু তোর চারপাশে যাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি, তাদের ভিড়ে যদি হারিয়ে যাই… সেই ভয়ে সরিয়ে রেখেছিলাম নিজেকে।
-হা কপাল আমার! কোনদিনই বা কে ছিল আমার আশেপাশে…যে সেদিন থাকবে?
আমি তো একা থেকেও একা…আবার সবার মাঝেও একা।
-আমি এক মনমর্জি বাউন্ডুলে রাংতা…এইসব সামাজিকতার আশা নাই বা রাখলি আমার কাছে!!
-সামাজিকতা? বেশ যদি তাই হয়… …তুই না সমাজবদ্ধ জীব? তুই চাইলেও যেতে পারিস না সমাজের বাইরে , সে তুই যতই বিপ্লব কর।
-বিপ্লব কিসের রাংতা?…আমি একজন নিতান্তই সাধারন মানুষ , যার সাধ আছে সাধ্য নেই?
-আচ্ছা… তুই কে এমন সৃষ্টিছাড়া মনফকিরা?তোর কি খিদে তেষ্টা ঘুম কিছু নেই…চাওয়া পাওয়া ইচ্ছে অনিচ্ছে জয় করেছিস অচীন পাখির সাধনায়?
-আমি যে কে, তাই তো হাঁতড়ে চলেছি রাংতা? দিনের শুরু থেকে দিনের শেষ পর্যন্ত একটাই খোঁজ , জারজ সমাজের কোলে আমি কোন সত্যকাম?কি আমার পরিচয়?
-আমি বলব মহুল……কেতাদুরস্ত সমাজের মুখ আর মুখোশের মাঝে তুই নিজেই তো এক জেহাদ!!
-এসব কথা থাক রাংতা…তার চেয়ে বল, তোর সাত সমুদ্দর দূরে থাকা স্বপ্নের সেই রাজপুত্তুরের কথা…আমি নাই বা ফোন করলাম, সে তো করেছিল?
-আহ মহুল… কতবার বলেছি সেই রাজপুত্তুর আমার পরিবারের পছন্দের মানুষ। আমার পছন্দের যদি কেউ থাকে তো সে কেবল তুই ।
– আচ্ছা …তোকে যদি দুজনের মধ্যে দাঁড়িপাল্লায় মেপে নম্বর দিতে বলি …কাকে কত নম্বরে পাশ করাবি শুনি?
– বোকা ছেলে… প্রতিটা মানুষ সারাজীবনে তার মনের মানুষ খুঁজে বেড়ায়…আর যার সাথে মনের মিল সবচেয়ে বেশি হয়, তাকেই বেছে নেয়…এই খোঁজ কখনও কখনও চলে আমৃত্যু …কিন্তু তুই তো আমার একশ’য় একশ। আমার আবার দাঁড়িপাল্লার কি প্রয়োজন?
-বুঝলাম…আচ্ছা বল কি চাস জন্মদিনের উপহার?
-তুই কি দিতে চাস শুনি?
-হুম… একটু ভাবতে দে।
-ভাবছিস আমায় কি দিবি?
পারিস যদি চাঁদ হতে
জ্যোৎস্না পাঠিয়ে দিস…
পারিস যদি ফাগুন হতে
দখিনা বাতাস এনে দিস…
পারিস যদি সাগর হতে
মুঠোখানেক ঢেউ দিলেই হবে…
কিছুই যদি না পারিস
নিদেনপক্ষে ছুঁয়ে দিস তবে!!
-তোর জন্যে সারাজীবন
ইচ্ছে ঘুড়ি
উড়িয়ে যেতে পারি
একটা গোটা আস্ত জীবন
কথায় কথায়
ফুরিয়ে দিতে পারি।
…………………………………………………………………………………………..ক্রমশ