পর্ব – ৪
মহুলের মাঝে আছে এক বাউলিয়া সুর ……দুরন্ত বোহেমিয়ানিজম……সে বাঁধা পড়তে চায় না কোনোরকম আকুতিতে…তাই তো সে মাঝে মাঝে হয়ে ওঠে অধরা … কি এক অদৃশ্য বেড়াজাল যেন মহুলকে রাংতার থেকে দূরে সরিয়ে রাখে……যদিও সে জানে ,তার একটি মাত্র সম্মতিতে রাংতাকে সে জয় করে নিতে পারে।
-তোর পায়ে কি ঘোড়ার ক্ষুর লাগানো আছে ,যে ছুটে বেড়াস? জীবনে কি কি স্বপ্ন আছে মহুল…..যা তোকে এমন করে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়!
-আমি বাউন্ডুলে , ছন্নছাড়া ….আমার আবার স্বপ্ন কি?
-কেন? স্বপ্ন দেখা কি বৈরাগ্যের অন্তরায়?
-আমার স্বপ্ন দেখতে ভয় করে, রাংতা।…স্বপ্ন গুলো যে ইচ্ছের সমুদ্র তৈরি করে। আর মন যে সেই ইচ্ছে পূরণের পথ খোঁজে ।
যদি তা হয় সর্বগ্রাসী….
যদি হয় ঢেউ এর ওপর ফসফরাস!
-তবে উঠুক জ্বলে সেই ফসফরাস…
আমিও কলম্বাস হব মহুল
উজানের পথে ঐ ঢেউয়ে,
আমার নাও ভাসিয়ে
তোকে নিয়ে যাব এক নতুন দ্বীপে ।
বানিয়ে তুলব এক চিলতে
ইচ্ছের বসতবাড়ি।
-তুই কিন্তু আবার আমায় স্বপ্ন দেখাচ্ছিস , রাংতা!!!
-ভয় কি মহুল ,আছি তো আমি।
আমার ইচ্ছেবাড়ির অলিন্দ থেকে
দেখব আমি তোকে।
দেখব আমি মহুল বৈরাগী
সাগরপাড়ে চুপটি করে বসে,
বালির চরে লিখছে আমার নাম।
-কি হবে রাংতা?
যদি ঢেউয়ের রাশি ঝাঁপিয়ে পড়ে
মুছে দেয় সে নাম!
-দিলে দেবে,তাতে কি হবে?
মনের পটে যে নাম লেখা,
তা কি মুছে যাবে?
-কিন্তু তোর ইচ্ছে বাড়ির চারপাশ যে
পাঁচিলে ঘেরা।
বন্ধ দরজার কপাটে লেখা
‘প্রবেশ নিষেধ’।
তাই তো ভাবি রাংতা ,
কি হবে, স্বপ্ন দেখে?
তার চেয়ে ভালো ….
চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বৈরাগ্য সাধন।
-‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি , সে আমার নয়!’
সে তোরও নয়।
পাঁচিলে ঘেরা কোঠাবাড়ির
খোলা দালানে দাঁড়িয়েও
মানুষ খোঁজে ,
চিরন্তন নিশ্চিন্ত আশ্রয় ।
তাই, নাইবা চিনলি অন্দরমহল
নাই বা খুঁজলি খিড়কি দুয়ার
যখন জানিস,
বারমহলে যতই থাকুক ছুৎমার্গ
সেই মহলের প্রতিটি ইটে
লেখা আছে শুধু তোরই নাম।
…………………………………………………………………………………ক্রমশ