পর্ব -১
______________________________________________________________________________________________________
‘ভেসে যায় আদরের নৌকা/ তোমাদের ঘুম ভাঙে কোলকাতায়/ হ্যালোজেন বৃষ্টিতে রঙ লিখে ঘর পাঠায় / ভিখিরীরা স্বপ্ন পায়/ তুষারের রাজধানী ধুয়ে যায় জ্যোৎস্নায় …’
-কিগো ফোনটা ধরো না…বাজছে তো।
-হুমমম…ধরছি।
শীতের কুয়াশা জড়ানো সকালে গরম কম্বলের ভেতর থেকে হাত বের করে ফোনটা ধরতে একটু দেরিই হয়ে গেল মিথিলের।
-দুররর… কেটে গেল!
-কার ফোন ছিল দেখলে?
-কি করে দেখব চশমা কই?
-ওহো দাঁড়াও দিচ্ছি। সাধে কি বলি এবার চোখটা আরেকবার দেখাও।
-আরে এ তো চালশে গো…বয়সটা কি কম হল!
চশমাটা হাত বাড়িয়ে সাইড টেবিল থেকে মিথিলের হাতে তুলে দিয়ে কম্বল সরিয়ে উঠে বসল সৃঞ্জা , আলগোছে মাথার চুলটা পাকিয়ে একটা হাতখোঁপা বানিয়ে পাশে রাখা গরম শালটা টেনে নিল।
-সেকি কথা আমার মিথিল বাবুর মুখে… বয়স বাড়ছে? ভাবা যায়…? এই যে বল শরীরের বয়স বাড়লে বাড়ুক , মনের বয়স বাড়তে দিও না।
– হ্যাঁ তো, শরীরের বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের যন্ত্রপাতির কলকব্জাগুলো তো পুরোনো হচ্ছে, নাকি?
-আচ্ছা তাই বুঝি, দেখি আমার মিথিলবাবুর শরীরের কলকব্জাগুলো কতটা পুরোনো হয়েছে… …এই বলে, সৃঞ্জা তার ঠান্ডা হাতদুটো কম্বলের ভিতর দিয়ে মিথিলের জামার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল ।
-এই যাহ…কি হচ্ছে কি? ওরে বাবারে কি ঠাণ্ডা, প্লিজ প্লিজ ঠাণ্ডা হাতটা দিও না শীত করছে , উফফফ তোমার হাত দুটো এমন বরফের মত কেন গো? আহ সরাও না…সরাবে না তো দাঁড়াও দেখচ্ছি মজা।
…এক ঝটকায় মিথিল কম্বলটা উল্টোদিকে ছুঁড়ে সৃঞ্জাকে জড়িয়ে চেপে ধরে খাটে ফেলল। তারপর নিজের খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে সৃঞ্জার নরম গালে গাল ঘষতে লাগলো।
-উঃ , লাগছে প্লিজ ছাড়ো না।
-না ছাড়ব না , নাও এবার তুমি কি করবে কর দেখি।
-প্লিজ মিথিল ছাড়ো না …আহা লাগছে তো আমার।
-না আমি শুনবই না । তুমি শুনেছিলে ?
…ফোনটা আবার বেজে উঠল। ‘ভেসে যায় আদরের নৌকা/ তোমাদের ঘুম ভাঙে কোলকাতায়/ হ্যালোজেন বৃষ্টিতে’ … মোবাইলের রিংটোনে অগত্যা সৃঞ্জাকে ছেড়ে মিথিলকে উঠতেই হল। মিথিলের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সৃঞ্জা তখন পালিয়ে বেঁচেছে । ঘোলাটে চোখে মোবাইলের স্ক্রীনে তাকালো মিথিল… ‘নাহ, ঠাওর হচ্ছে না নামটা…ফোনটা কানে তুলে মিথিল বলল,
-হ্যালো…হ্যালো কে?
-ভালো আছো মিথিলদা?
-কে ?
-মনে হচ্ছে ভুলে গেছ আমাকে?…আমি কঙ্কা!!!
মিথিলের শীতের সকালের আদরের আমেজটা কেমন গুটিয়ে গেল ! কান দিয়ে যেন একটা উষ্ণপ্রস্রবনের ধারা সোজা স্বাধিষ্ঠান চক্র হয়ে মনিপুরা চক্রে এসে ধাক্কা মারলো।
-তুমি কি বিরক্ত হলে মিথিলদা?
-তা হঠাৎ কি মনে করে?
-তোমার সাথে একটু দরকার ছিল মিথিলদা? একটু সময় দেবে আমাকে?
-বলো কি বলতে চাও?
-না মানে এভাবে কথা বলা যাবে না…একটু দেখা করলে ভালো হত ? একবার দেখা করবে আমার সাথে? কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল মিথিল,
মিথিলকে চুপ দেখে কঙ্কা এবার একটু কঠিন স্বরে বলল,
-অবশ্য তুমি না চাইলে আমি জোর করব না…ইনফ্যাক্ট সে অধিকারও এখন আমার আর নেই। তাই না মিথিলদা?
-কি বলতে চাও একটু পরিস্কার করে বললে ভালো হত কঙ্কা…জানোই তো এত কমপ্লিকেশন আমার ভালো লাগে না।
-আজ কতদিন পর তোমার মুখে এই কঙ্কা ডাকটা শুনলাম!!!কেমন যেন পুরোনো সময়গুলো আমাকে ঘিরে ধরছে …সত্যি বল তোমার সেই পুরোনো কথাগুলো কিছু মনে পড়ছে না? একবার দেখা করলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে মিথিলদা? পারবে তো আমাকে অস্বীকার করতে নিজের কনসেন্সের কাছে???
-অতো কথার কিছু নেই কঙ্কা…বলো কবে আর কোথায় দেখা করতে চাও?
-তুমি বলো তোমার সুবিধা মত। তবে আজই হলে ভালো হয়।
-আজই? কিন্তু আজ তো সারাদিনে অনেকরকম কাজ আছে? তাছাড়া আজতো ৩১শে ডিসেম্বর, সন্ধ্যে থেকে বেশ ভিড় হয়ে যাবে।
-তোমার অফিসটা এখনো সেই পার্ক ষ্ট্রীটেই আছে তো?
-হুমমম… সন্ধ্যে ছটার পর হয়ত একটু ফাঁকা থাকব আমি , চাইলে আমার অফিসে আসতে পারো, যদি কোনও অসুবিধে না থাকে ।
-না না ঠিক আছে। আমি তাহলে আজ সন্ধ্যে ছটার পরই তোমার অফিসে যাব। ভুলে যেও না কিন্তু!!
-না মনে থাকবে…তুমি এসো।
-থ্যাঙ্ক ইউ স মাচ মিথিলদা।
ফোনটা ছেড়ে দিল মিথিল । গলার কাছে কি যেন ঠেলে উঠে আসার মত একটা অনুভুতি হচ্ছিল। মুখটা বড় বিস্বাদ লাগছিল।–নাহ একটা সিগারেট ধরাতে হবে। বিছানার পাশে রাখা গায়ের চাদরটা জড়িয়ে উঠে পড়ল মিথিল।
______________________________________________________________________ক্রমশ