আজ স্বাধীনতা দিবস। কাল রাত্রি থেকেই ঐমুদিদি একটু নিজের মত করে দিনটা কাটাবে বলে ঠিক করে রেখেছিল…ভোরবেলা অ্যালার্ম বেজে উঠল…. একরাশ বিরক্তি নিয়ে অ্যালার্মটা বন্ধ করতেই ঐমুদিদির হাব্বি বলে উঠল …
-কিগো আবার শুয়ে পড়লে যে,
-রোজই তো আমি আগে উঠি, আজ একটু শুতে দাও না। …আজ না স্বাধীনতা দিবস।
চুপ করে গেল ঐমুদিদির স্বামী। এমন সময়ই শুরু হয়ে গেল পাড়ার মোড়ে ‘হ্যালো টেস্টিং …হ্যালো…হ্যালো ওয়ান, টু , থ্রী, ফোর……
-আহ এতো বড়ো জ্বালা হল দেখছি…একটু ঘুমতেও দেবে না…কি বিপদ!!
…কানের ওপর বালিশ চাপা দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে পাশ ফিরে শু’ল ঐমু দিদি। এমন সময় বেডরুমের দরজায় দুমদুম শব্দ…
-‘আরে বাবা বাড়িতে ডাকাত পড়ল নাকি…এমন পিলে চমকানি হাঁকডাক কেন রে বাবা?
…ঐমুদিদির মেয়ে পুপুদিদি চিৎকার করে উঠল….
-বাবা বাবা তাড়াতাড়ি দরজা খোলো
…ততক্ষনে বাবা মানুষটি বিছানা ছেড়ে ওঠার পথ পাচ্ছে না , পায়ে চাদর জড়িয়ে এই পড়ে তো সেই পড়ে…কোনক্রমে সামলে সুমলে উঠে দরজা খুলে বলল ,
-কিরে হল কি?
-কিগো ঘুমোচ্ছে যে বড়ো, চলো ফ্ল্যাগ হোয়েস্ট করতে হবে তো … কিগো মা ফ্ল্যাগটা বানাব তো? চলো…
ঐমুদিদির তো ছেড়ে দে’মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা, ঘুম মাথায় উঠল…বলল,
-আছে তো ফ্ল্যাগ , কাল আলমারী থেকে বার করে রেখেছি তো … দাঁড়া না,আর একটু পরে ওটাই তুলব সবাই মিলে…সবে তো ভোর পাঁচটা, একটু ঘুমোতে দে না সোনা।
মেয়ে কানের কাছে বলে চলল,
-ছিঃ মা , আজকের দিনে এত ঘুম কিসের তোমার…দাদাই বলে যে শুয়ে থাকে তার ভাগ্যও শুয়ে থাকে…জানো মা স্কুলে বলেছে ……Be a true Indian । চল নিজের হাতে ফ্ল্যাগ বানিয়ে তবে ওড়াব…
অগত্যা উঠতেই হল… অন্যদিন হলে ঐমুদিদি ধমকে চুপ করিয়ে দিতে পারত কিন্তু…আজ যে স্বাধীনতা দিবস।
ওদিকে পাড়ার মাইকে গান শুরু হয়ে গেছে…‘ওঠো গো ভারত লক্ষ্মী…’, ঐমুদিদি ভাবল এমন বেসুর গানে ভারতলক্ষ্মী নাই বা উঠল, সারা পাড়ার লক্ষ্মীমন্ত বউরা উঠবেই উঠবে। ঘুম থেকে ওঠা তো নয়…! উঠলেই রুটিন । চান করো , পুজো করো… ও বাবা আজ তো কাজের পাহাড়…কাজের মেয়ে স্বাধীনতা মানাতে কাল থেকে ডুব দিয়ে দিয়েছে…রান্নার মাসি তো আগে ভাগেই তিনদিনের জন্য স্বাধীনতা সেলিব্রেট করতে দীঘা বেড়াতে গেছেন …সারা ঘরের সমস্ত কাজের বোঝা এখন ঐমুদিদির মাথায়.. ফ্ল্যাগ বানাবো বললেই হল নাকি!!!…কিন্তু পুপুদিদি তো ছাড়াবার পাত্রী নয়…অবশেষে মনে মনে ঐমুদিদি তার গোপাল ঠাকুরের উদ্দেশ্যে বলল ‘ একটু সবুর কর ঠাকুর, আগে তোমার গোপালীকে শান্ত করি না হলে যে পুজোতে মনটাও বসবে না’ …মেয়ের ঘরে গিয়ে আঁকার খাতা , পেন্সিল, স্কেল, রঙ, তুলি , জল সব নিয়ে হুমড়ি খেয়ে বসল ঐমুদিদি। ততক্ষনে মেয়েও লেগে পড়েছে …ঝান্ডা ওড়ানোর জন্য ডান্ডা খুঁজতে …নিচে একচিলতে বাগানের পাতা বাহারি গাছ থেকে একটা বেশ বড়ো ডাল ভেঙ্গে নিয়ে এসে বলল
-দেখ মা এটা জমবে না ….?
-খুব জমবে…
…..হাতে করে গাছের ডালটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে ভাবল, এই সেই মহান ডাণ্ডা যার মাথায় শোভা পাবে আমাদের সাধের তিরঙ্গা… এদিকে ঐমু দিদির হাব্বি মানুষটি নিঃসাড়ে হেব্বি চা বানিয়ে ফেলেছে ততক্ষণে …ভালো লাগার বিষয় একটাই সবাই কিন্তু যার যার নিজের স্বাধীনতা খুইয়ে অন্যের চাওয়াটাকেই সম্মান জানাতে ব্যস্ত…।এদিকে গেরুয়া সবুজ রঙ তো হল কিন্তু মাঝের নীল চক্রটাকে চব্বিশটা সমান ভাগ করতে কাল ঘাম ছুটে গেল ঐমুদিদির …মেয়ে পাশ থেকে সাহস জুগিয়ে বলে গেল ‘ হবে হবে মা ,Be a true Indian,’ ……তুলি টানে একটা একটা করে দাগ সন্তর্পনে এঁকে শেষ মেশ তৈরি হল … ‘তিরঙ্গা’… ‘Our Tricolour’ ,গাছের ডালের মাথায় আটকে দিতেই যেই না হাওয়ায় নড়ে চড়ে উঠল, কেমন যেন মনটা হু হু করে উঠল…ওদিকে ততক্ষণে ঐমুদিদির সব কাজের দফা রফা…. তার নিজের স্বাধীনতা তো মাথায় উঠেছে কাল রাত্রি থেকেই …। বড়ো রাস্তার মুখের বাসস্ট্যান্ডে রাত বারোটার পর থেকে এমন বাজি আর পটকার বহর , যে ঘুমের মাঝে চমকে চমকে উঠছিল ঐমুদিদি…তবু আজ ছাদের কোনে বড়ো পতাকার পাশে মেয়ের উৎসাহে বানানো ছোট্ট পতাকাটাকে হাওয়ায় উড়তে দেখে খুশিতে ঐমুদিদির চোখ দুটো জলে চিকচিক করে উঠল…। ভেতর থেকে একটা আবেগ যেন ঠেলে বেরিয়ে এসে তার মুখ দিয়ে বলিয়ে নিল… Be a true Indian ঐমু…।।