oimookh.com/@indrila

oimookh.com/@indrila

আজ স্বাধীনতা দিবস। কাল রাত্রি থেকেই ঐমুদিদি একটু নিজের মত করে দিনটা কাটাবে বলে ঠিক করে রেখেছিল…ভোরবেলা অ্যালার্ম বেজে উঠল…. একরাশ বিরক্তি নিয়ে অ্যালার্মটা বন্ধ করতেই ঐমুদিদির হাব্বি বলে উঠল …
-কিগো আবার শুয়ে পড়লে যে,
-রোজই তো আমি আগে উঠি, আজ একটু শুতে দাও না। …আজ না স্বাধীনতা দিবস।
চুপ করে গেল ঐমুদিদির স্বামী। এমন সময়ই শুরু হয়ে গেল পাড়ার মোড়ে ‘হ্যালো টেস্টিং …হ্যালো…হ্যালো ওয়ান, টু , থ্রী, ফোর……
-আহ এতো বড়ো জ্বালা হল দেখছি…একটু ঘুমতেও দেবে না…কি বিপদ!!
…কানের ওপর বালিশ চাপা দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে পাশ ফিরে শু’ল ঐমু দিদি। এমন সময় বেডরুমের দরজায় দুমদুম শব্দ…
-‘আরে বাবা বাড়িতে ডাকাত পড়ল নাকি…এমন পিলে চমকানি হাঁকডাক কেন রে বাবা?
…ঐমুদিদির মেয়ে পুপুদিদি চিৎকার করে উঠল….
-বাবা বাবা তাড়াতাড়ি দরজা খোলো
…ততক্ষনে বাবা মানুষটি বিছানা ছেড়ে ওঠার পথ পাচ্ছে না , পায়ে চাদর জড়িয়ে এই পড়ে তো সেই পড়ে…কোনক্রমে সামলে সুমলে উঠে দরজা খুলে বলল ,
-কিরে হল কি?
-কিগো ঘুমোচ্ছে যে বড়ো, চলো ফ্ল্যাগ হোয়েস্ট করতে হবে তো … কিগো মা ফ্ল্যাগটা বানাব তো? চলো…
ঐমুদিদির তো ছেড়ে দে’মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা, ঘুম মাথায় উঠল…বলল,
-আছে তো ফ্ল্যাগ , কাল আলমারী থেকে বার করে রেখেছি তো … দাঁড়া না,আর একটু পরে ওটাই তুলব সবাই মিলে…সবে তো ভোর পাঁচটা, একটু ঘুমোতে দে না সোনা।
মেয়ে কানের কাছে বলে চলল,
-ছিঃ মা , আজকের দিনে এত ঘুম কিসের তোমার…দাদাই বলে যে শুয়ে থাকে তার ভাগ্যও শুয়ে থাকে…জানো মা স্কুলে বলেছে ……Be a true Indian । চল নিজের হাতে ফ্ল্যাগ বানিয়ে তবে ওড়াব…
অগত্যা উঠতেই হল… অন্যদিন হলে ঐমুদিদি ধমকে চুপ করিয়ে দিতে পারত কিন্তু…আজ যে স্বাধীনতা দিবস।
ওদিকে পাড়ার মাইকে গান শুরু হয়ে গেছে…‘ওঠো গো ভারত লক্ষ্মী…’, ঐমুদিদি ভাবল এমন বেসুর গানে ভারতলক্ষ্মী নাই বা উঠল, সারা পাড়ার লক্ষ্মীমন্ত বউরা উঠবেই উঠবে। ঘুম থেকে ওঠা তো নয়…! উঠলেই রুটিন । চান করো , পুজো করো… ও বাবা আজ তো কাজের পাহাড়…কাজের মেয়ে স্বাধীনতা মানাতে কাল থেকে ডুব দিয়ে দিয়েছে…রান্নার মাসি তো আগে ভাগেই তিনদিনের জন্য স্বাধীনতা সেলিব্রেট করতে দীঘা বেড়াতে গেছেন …সারা ঘরের সমস্ত কাজের বোঝা এখন ঐমুদিদির মাথায়.. ফ্ল্যাগ বানাবো বললেই হল নাকি!!!…কিন্তু পুপুদিদি তো ছাড়াবার পাত্রী নয়…অবশেষে মনে মনে ঐমুদিদি তার গোপাল ঠাকুরের উদ্দেশ্যে বলল ‘ একটু সবুর কর ঠাকুর, আগে তোমার গোপালীকে শান্ত করি না হলে যে পুজোতে মনটাও বসবে না’ …মেয়ের ঘরে গিয়ে আঁকার খাতা , পেন্সিল, স্কেল, রঙ, তুলি , জল সব নিয়ে হুমড়ি খেয়ে বসল ঐমুদিদি। ততক্ষনে মেয়েও লেগে পড়েছে …ঝান্ডা ওড়ানোর জন্য ডান্ডা খুঁজতে …নিচে একচিলতে বাগানের পাতা বাহারি গাছ থেকে একটা বেশ বড়ো ডাল ভেঙ্গে নিয়ে এসে বলল
-দেখ মা এটা জমবে না ….?
-খুব জমবে…
…..হাতে করে গাছের ডালটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে ভাবল, এই সেই মহান ডাণ্ডা যার মাথায় শোভা পাবে আমাদের সাধের তিরঙ্গা… এদিকে ঐমু দিদির হাব্বি মানুষটি নিঃসাড়ে হেব্বি চা বানিয়ে ফেলেছে ততক্ষণে …ভালো লাগার বিষয় একটাই সবাই কিন্তু যার যার নিজের স্বাধীনতা খুইয়ে অন্যের চাওয়াটাকেই সম্মান জানাতে ব্যস্ত…।এদিকে গেরুয়া সবুজ রঙ তো হল কিন্তু মাঝের নীল চক্রটাকে চব্বিশটা সমান ভাগ করতে কাল ঘাম ছুটে গেল ঐমুদিদির …মেয়ে পাশ থেকে সাহস জুগিয়ে বলে গেল ‘ হবে হবে মা ,Be a true Indian,’ ……তুলি টানে একটা একটা করে দাগ সন্তর্পনে এঁকে শেষ মেশ তৈরি হল … ‘তিরঙ্গা’… ‘Our Tricolour’ ,গাছের ডালের মাথায় আটকে দিতেই যেই না হাওয়ায় নড়ে চড়ে উঠল, কেমন যেন মনটা হু হু করে উঠল…ওদিকে ততক্ষণে ঐমুদিদির সব কাজের দফা রফা…. তার নিজের স্বাধীনতা তো মাথায় উঠেছে কাল রাত্রি থেকেই …। বড়ো রাস্তার মুখের বাসস্ট্যান্ডে রাত বারোটার পর থেকে এমন বাজি আর পটকার বহর , যে ঘুমের মাঝে চমকে চমকে উঠছিল ঐমুদিদি…তবু আজ ছাদের কোনে বড়ো পতাকার পাশে মেয়ের উৎসাহে বানানো ছোট্ট পতাকাটাকে হাওয়ায় উড়তে দেখে খুশিতে ঐমুদিদির চোখ দুটো জলে চিকচিক করে উঠল…। ভেতর থেকে একটা আবেগ যেন ঠেলে বেরিয়ে এসে তার মুখ দিয়ে বলিয়ে নিল… Be a true Indian ঐমু…।। 

  

রাত তখন বেশ গাঢ়…। গোটা ঘরটা নীল আলোয় ভেসে যাচ্ছে। স্বপ্ন স্বপ্ন সেই মায়াবী মুহুর্তে ঘুমন্ত হিমাদ্রি যত জড়িয়ে ধরছে অন্বেষা ততই হাঁফিয়ে উঠছে। হিমাদ্রির আদরের পরিভাষাটা একটু অন্যরকম ,তাও অন্বেষা যতটা পেরেছে নিজেকে মানিয়ে নি্তেই চেষ্টা করে এসেছে এতকাল…। আজ কিন্তু একটু হাল্কা আপত্তিতে , আলগোছে সরিয়ে দিল হিমাদ্রির বলিষ্ঠ হাতের বাঁধন ……” ছাড়ো না প্লিজ ” তারপর এক ঝটকায় বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল অন্বেষা…। ঘুরে তাকাল ঘুমন্ত স্বামীর মুখের দিকে…। উফ অসহ্য লাগছে হিমাদ্রির ছোঁয়াটা আজ অন্বেষার…।
ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল অন্বেষা…। নিশুথ রাত…চারপাশ নিরালা নিঝুম…ঝিঁ ঝিঁ ডাকছে থেকে থেকে… তার চোখটা জ্বালা করছে …খানিকটা বুক চাপ লাগছিল সেই সন্ধ্যে থেকে… টিভিতে দেখা টুকরো খবরটা আজ তাকে বড়ো বেসামাল করে দিয়েছে……। ‘ভাস্কর সবুজ সেনগুপ্তের স্থাপত্যের কৃতিত্ব ভারতের সংস্কৃতিকে আরও একবার আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে নিয়ে গেছে ‘…একটা ছোট সাক্ষাৎকার……আর কার কাছে কতটা মানে রাখল কে জানে , কিন্তু আজ এতবছর পরেও যেন সেই সমান উত্তাপে অন্বেষাকে তার শিকড় থেকে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
আলতো করে ঘরের দরজাটা টেনে দিয়ে , রকিং চেয়ারে এসে বসল অন্বেষা…। বন্ধ দরজার ওদিকে পরম নিশ্চিন্তে যখন হিমাদ্রি নীল আলোয় অচেতন ,তখন উত্তুরে ঠান্ডা হাওয়ায় অন্বেষা সমানে ভিজে চলেছে…চোখের সামনে একটাই দৃশ্য…। সারা ঘরে মাটি আর পাথরের আবক্ষ নিষ্প্রাণ মুর্তির মাঝে দুটো জীবন্ত সত্ত্বার জৈবিক অনুসন্ধান……। সবুজ তার ইচ্ছের রূপ দিতে অন্বেষার শরীর পর্যন্ত পৌঁছেছিল …আর অন্বেষা ?…সে তো সবুজের সৃষ্টিতে মরেই ছিল…মনটাই যখন দিয়ে দিয়েছিল…শরীর আর কি বিষম বস্তু???……সবুজের উষ্ণ পরশে সেই কবেই তো পুড়ে গিয়েছিল অন্বেষা…। কিন্তু কেন সবুজ কাজের নেশায় ভালবাসাটাকে অমন অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিল? কেন সে শুধু নিজের সৃষ্টিতে বিভোর হয়ে অন্বেষাকে অবহেলা করল ? ………এই ক’বছরে একবারও কি সবুজ তাকে মনে করেনি…? তার সৃষ্টির মাঝে একটু হলেও কি অন্বেষার জায়গা ছিল না ? ………এইসব প্রশ্ন আজ যেন অন্বেষাকে নতুন করে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল …।
দরজা ঠেলার শব্দে অন্বেষা কান্নাটাকে বিলকুল গিলে ফেলল…আর কোল্ড ক্রীমের মত করে নোন্তা চোখের জলটা সারা মুখে মেখে ফেলে , পিছন ঘুরে তাকালো……। হিমাদ্রি এসে দাঁড়িয়েছে…। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই হিমাদ্রি তাকে নিজের গরম চাদরে জড়িয়ে নিয়ে বলল..”ঠান্ডা লেগে যাবে যে , ভেতরে চলো”। আশেপাশে দু একটা কাকের ডাক শোনা যাচ্ছে…আকাশের জমাট অন্ধকারটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে এসেছে…..আর একটু পরেই আলো ফুটে যাবে……ভোর হয়ে যাবে …….হিমাদ্রির বাহুবন্ধনে থেকে অন্বেষা মনে মনে আশ্লেষে বলল……’সবুজ হয়ত নাম করা ভাস্কর হতে পারবে, কিন্তু কোনোদিনও হিমাদ্রির মত মানুষ হতে পারবে না…।’

  

এ তুমি কেমন তুমি

চশমার কাচটা মুছতে মুছতে দমদম এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল মঞ্জীর। মুম্বাইয়ের ফ্লাইটের অ্যানাউন্সমেন্ট হয়ে গিয়েছে। সঙ্গের হাতব্যাগটা খুলে চশমাটা ভেতরে রাখল সে। প্লেনের ভিতর এয়ারহোস্টেস টিকিট অনুযায়ী জানলার ধারের একটি সিট দেখিয়ে দিল …। কাচের মধ্যে দিয়ে যতদুর চোখ যায় সে তাকিয়ে দেখল…এই অপরিচিত কলকাতা শহরটাকে ছেড়ে যেতে তার বেশ মনখারাপ লাগছিলো। ব্যাগের ভেতর থেকে চশমাটা বার করতে গিয়ে প্যাকেটটা চোখে পড়তেই…মনে মনে ভাবল…’ কি এটা? । পিয়াল একবার দেখা করতেও এল না…অথচ গিফট প্যাকটা রিসেপশনে রেখে গেছে’ ..অফিসের গেস্ট হাউস ছাড়ার সময় কেয়ারটেকার প্যাকেটটা মঞ্জীরকে দিল …। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে… মোড়কটা খুলতেই তার ম্লান মুখটা যেন শেষ বিকেলের চুরি যাওয়া আলোয় রক্তিম হয়ে উঠল। তার ভীষন পছন্দের একটা বই…জয় গোস্বামীর ‘ পাগলী তোমার সঙ্গে ‘…প্রথম পাতা ওল্টাতেই দেখল নিচে লেখা…” আমার জন্মদিনে আজ তোমায় দিলাম…পাগল”…তার একটু নিচে আজকেরই তারিখটা…। এক লহমায় অদ্ভুত একটা ভাল লাগায় তার চোখটা চিক চিক করে উঠল। তার ভীষণ ইচ্ছে হতে লাগল সমস্ত অভিমান ভুলে ছুটে যায় পিয়ালের কাছে…। তার বুকের ওপর আছড়ে পড়ে বলে…”আগে কেন বললে না ? …আমি তো ফিরতে চাইনি……”
এয়ার হোস্টেস মঞ্জীরকে সিকিউরিটি বেল্ট বাঁধতে অনুরোধ জানালো…। প্লেন ছুটে চলল গ্রাউন্ডের ওপর দিয়ে…। তার গতি আশেপাশের সব কিছুকে ছাড়িয়ে একলাফে যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলল। জানলার কাচের ভেতর দিয়ে মঞ্জীর চেয়ে রইল নিচে ফেলে আসা কলকাতার ব্যস্ত পথঘাট দোকানপাট ,অফিস-কাছারী!!!

  

 

অলীক সত্য@Oindrila

অলীক সত্য@Oindrila

বট গাছটার বেদীর পিছন থেইকে ভেইসে আসতিছে বিকট পোড়াগন্ধটা….আইজ হপ্তাখানেক হইল নূরপুর শ্মশানঘাটের ইলেকট্রিক চুল্লীটা কাজ করতিছে না। অগত্যা সেই-ই কাঠের চিতেয় পুড়তিছে বৈজু। মাঝে মাঝে বাঁশপেটা করতিছে ডোমটা…। সাজিয়ার মাথাটা ক্যামন ঘুইরছে , কানটা ভোঁ ভোঁ কইরছে, গাটাও গুইলোচ্ছে….বসতির সবাই মিলে ধরাধইরি কইরে ,তারে এইনে বইসিছে বটের ছাওয়ায়। কালো ধোঁয়া উইড়ে পুইড়ে খাক কইরে দিচ্ছে বৈজুর রক্ত মাখা নিথর দেহটারে….।

দূরে কাত্যায়নী মন্দিরের দাওয়ায় চোরের মত মুখ কইরে, মাথায় হাত দিয়ে বইসে আছে কাঁদন… চোখ দুইটোতে ক্যামন মায়া উপচিয়ে পইড়ছে….পাঁচ বইছরের বিনুটার মাথা নিজের কোলের মইধ্যে গুঁইজে রাইখেছে কাঁদন…..। বাপের মুখে আগুন ছুঁইয়ে বিনুটা যেন ক্যামন ভ্যাবলা মেরে গেইছে। কাঁদন যে আইজ ক্ষমা করতি পারতিছে না নিজেরে, তারই জন্যিই তো আইজ এমনি বিপত্তি ….পার্টি আপিসের ঐ ছিইলেগুলান যদি তারে টেইনে নিইয়ে না যেইত …… আর তাই দেইখে যদি তারে বাঁচাইতে হেঁসো হাতে বৈজু না ছুইটতো ….তবে বন্ধ কারখানার মেশিন ঘরে ওই হেঁসোরই এক কোপে লুটিয়ে পড়তি হইত না বৈজুরে!!!!!

পাঁচ মাসের পোয়াতি সাজিয়া হাত নেইড়ে কাছে ডাইকলো কাঁদনরে….সে জাইনে না কাইল কি হইব? তাদের পেট চলবে কোথ্থকেন? শুধু জাইনে এই বাপ মা মরা কচি বেধবা কাঁদনটারে বাঁচাইতে হইব,নাইলে বৈজুর মরণটা যে পানসে হইয়ে যাইব….ধীর পায়ে হেঁইটে গেইল কাঁদন…সেও জাইনে সাজিয়া বাচ্চা না বিয়োনো পর্যন্ত সব দায় যে এখন তারই….কাঁদন চোখের জল মুইছে সাজিয়ারে জাপটে ধইরল… সাজিয়া কাঁদনরে বুকে টেইনে নিইয়ে ভাবলো,এরপরও ভোট চাইতে আইসে শয়তানগুলান, পাল্টা দরদ দেখাইতে আইসে উন্য পার্টি ….কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি কইরে ধামাধইরা লোকগুলান একে অন্যেরে…. ভোট কাইটাকাইটিতে কাইল জিতবে হয়ত উন্য দল….কিন্তু বৈজু কি আর ফিরে আইসবে???? জাইনতে পারবে খপরটা… এইবারে সাজিয়ার পেটেরটা মেইয়ে না ছিইলে ???

 

  

কদিন হলো বাঁ পায়ে একটা ব্যথা হচ্ছে অহনার। গোড়ালিটা যেন ফেলতেই পারছে না।…এমন হলে তো মহা মুশকিল!!! হাঁটাচলা করা দায়। কাজের তো আর শেষ নেই… রিমঝিমের টিউশন …ক্যারাটে ক্লাস….অ্যাবাকাস ট্রেনিং…নিজের অফিস… তারওপর তো আছেই টুকটাক ব্যাঙ্কে যাওয়া… এটা ওটা কেনাকাটা আর সারাদিনে কম করে হলেও সাত আটবার ওপর নীচ। হাউস ফিজিশিয়ান অলকেশদা বললেন…”ইউরিক অ্যসিডের লেভেলটা চেক করিয়ে নাও অহনা”….তাই আজ ঋদ্ধির পেড়াপেড়িতে অফিস ছুটি নিয়েছে অহনা ….রিমঝিমকে কম্পিউটার ক্লাসে ড্রপ করে এসে দুজনে এসে পৌঁছলো নিরীক্ষণে …ঋদ্ধিরই বন্ধু মৃণ্ময়ের ডাইগনিস্টিক সেন্টারে…. অহনার ব্লাড টেস্ট করাতে। আজ আকাশটা বড়ো বেশি মেঘলা….কেমন যেন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছিল আসার পথে…বর্ষা বুঝি চলে এলো! মৃণ্ময় ঋদ্ধিকে বললো ” ফাস্টিং এ ব্লাড টেস্ট করাবিই যখন ,একেবারে সুগার, টি এস এইচ…লিপিড প্রোফাইল সব কটা করিয়ে নে”…ঋদ্ধিও একমত…আজকাল সবাই একটু বেশিই হেলথ কনশাস। একটু সময় নিল মৃণ্ময়..আজ কালেকশানের ছেলেটা নেই….হাতের কাজ কটা গুছিয়ে নিল একটু…ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক কথা জুড়ে দিল অহনা…ততক্ষণে আকাশ সাজো সাজো হয়ে গেছে….বৃষ্টি এলো বলে….ঋদ্ধি বললো ” কুইক মৃণ্ময়…বৃষ্টি আসছে ভিজে যাব….”কিছু সময় পরে এক সিরিঞ্জ রক্ত টেনে নিয়ে অহনাকে ছেড়ে দিল মৃণ্ময়….বললো,”রিপোর্ট কাল পেয়ে যাবি।”
….নিরীক্ষণ থেকে বেরোতেই আকাশ গুড়গুড় করে উঠলো…ঝোড়ো হাওয়ায় চারপাশটা আবছা হয়ে গেল….ঋদ্ধি বাইকের চাবিতে হাত রেখেই বললো,
– বেডরুমের জানলা লাগানো তো?
-না তো? বুঝবো কি করে বৃষ্টি হবে!
-কেন? তুমি দেখলে তো আকাশ মেঘলা…
-সবসময় কি মেঘ করলেই বৃষ্টি হয়??…আচ্ছা বাবা ভুল হয়েছে ….কথা বাড়িও না … চলো তো।
-দেরি তো তুমি করলে মৃণ্ময়ের সাথে গল্প জুড়ে…নাও ওঠো ওঠো।
…. বাইক স্টার্ট নিয়ে বড়ো রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে ফ্লাইওভারে উঠতেই শুরু হল চিটির পিটির বৃষ্টি …ঋদ্ধি বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিল…. বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন পিনের মতো ফুটতে লাগলো অহনার শরীরের ফাঁকা অংশে ।অহনার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ঋদ্ধির কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে কোমর জড়িয়ে আরও কাছাকাছি বসতে ,আগের মতো….সেই আগের মতোই বৃষ্টির দিনগুলোতে একসাথে ভিজতে চাওয়ার ইচ্ছেয় গোটা কোলকাতা শহরের অলি গলিকে সাক্ষী রেখে ছুটে বেড়াতে…..আজও সেই মেঘ….সেই কালো আকাশ…সেই বৃষ্টি…. সেই বাইক….সেই ঋদ্ধি ….সেই অহনা ….শুধু মাঝে গড়িয়ে গেছে কয়েকটা বছর…আর সাথে সাথে বুঝি হারিয়ে গেছে সেই ফেলে আসা দুরন্ত বেপরোয়া ইচ্ছেগুলো!!! বৃষ্টির মধ্যেই ফ্লাইওভার থেকে দেখা যাচ্ছে দূরের আকাশ ছোঁয়া অফিস বিল্ডিং ….বড়ো বড়ো বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ….নীচে দিশেহারা লোকজন….অটোমেটিক রোড সিগন্যালে ফাঁকা হয়ে যাওয়া ক্রসিং … আর কানে আসছে ঋদ্ধির একরাশ বিরক্তির কথা…শ্লেষাত্মক বকুনির রেশ….তবু সবকিছুকে ছাপিয়ে অহনা ভীষণভাবে ঋদ্ধিকে বলতে চাইলো…”ক্ষতি কি আছে গো….একটু না হয় ভিজলোই তোমার বাড়ির খোলা দুয়ার উঠোন ….একটু না হয় হলোই আজ বৃষ্টি বৃষ্টি মন!!!”……..আজ কেমন একটা তীব্র হিংসে হলো তার ফেলে আসা অতীতটাকে …. দীর্ঘশ্বাসে জ্বালা করে উঠলো চোখের কোণদুটো….বৃষ্টির জলের আবেশ আর চোখের জলের আক্ষেপ মিলেমিশে কিছুই বলা হল না ঋদ্ধিকে শুধু আরও একবার মনের মাঝে গুনগুনিয়ে উঠলো রবি ঠাকুর….”তুই ফেলে এসেছিস কারে….মন ,মন রে আমার!!

  
PAGE TOP
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com
Copy Protected by Chetans WP-Copyprotect.
Skip to toolbar