পর্ব – ৫।
অফিস থেকে বেরিয়ে এল কঙ্কা। বছরের শেষদিন । ডিসেম্বর মাস। কড়া ঠান্ডা। আলোকিত পথঘাট , হোটেল , রেস্তরাঁ গাছপালা সব কিছু ঝলমল করছে নতুন বছরের অপেক্ষায়। চারিদিকে বেশ মানুষের ঢল , জনজোয়ার বইতে শুরু করেছে কলকাতার আনাচে-কানাচে…পার্ক স্ট্রীটের অলি গলি পাকস্থলিতে । সবাই কত কত খুশি। কিন্তু কঙ্কার মনটা অস্থির লাগছে , কিছুটা এই বিসদৃশ ঘটনার জন্য কিছুটা বা মিথিলের জন্য। কঙ্কা জানে মিথিল এমন নয়… আর আজকের এই কথার তেমন তাৎপর্যও নেই… হয়ত মিথিলের কিছুই করার নেই , তাই নিজের অপারগতা ঢাকতেই এমন অভিনয় করল সে। কঙ্কার বাসবকে চিনতে ভুল হলেও মিথিলকে চিনতে তার এতটুকুও ভুল হয় নি। কিন্তু বাসবকে সে কি বলবে ? এই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই কঙ্কার ফোন বেজে উঠল… ‘আলো আলো রঙ, জমকালো চাঁদ ধুয়ে যায়/ চেনা শোনা মুখ, জানা শোনা হাত ছুঁয়ে যায়, ধীরে ধীরে ঘুম ঘিরে ঘিরে গান রেখে যায়/ কিছু মিছু রাত পিছু পিছু টান ডেকে যায়’ …..বাসবের ফোন। …স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে প্রবল অনীহায় ফোনটা ধরতে বাধ্য হল কঙ্কা। বাসবকে এড়িয়ে তো যাওয়া যাবে না, পেরিয়ে যেতে হবে কিম্বা বলা ভালো মাড়িয়েই যেতে হবে।
-হ্যালো
-কি কথা হল তোমার বুড়ো বয়ফ্রেন্ডের সাথে?
-ওভাবে বলছো কেন?
-আচ্ছা, বুড়ো বললাম বলে বুঝি রাগ হল?
-নাহ , বয়ফ্রেন্ড বলছ বলে গায়ে লাগছে।
– সরি সরি…এক্স বয়ফ্রেন্ড…এবার ঠিক আছে তো।
-চুপ কর ভালো লাগছে না আমার।
-কেন পুরোনো প্রেম উথলে উঠেছে বুঝি। কি মুখে উত্তর নেই কেন?
-ভাল্লাগছে না কথা বলতে।
-তা লাগবে কেন? আমি যে বর তা ওই বর্বরটা কি বলল। আমার ব্যাপারটা একটু সেট করে দেবে কি? তোমার সাথে এতো যে সময় কাটালো তা কি এমনি এমনি? ইন্টারেস্ট দিতে হবে তো!
-কিসের ইন্টারেস্ট? কি সব বলছ?
-ও তুমি বুঝবে না …ছাড়ো। তা বলছেটা কি শুনি ? তুমি আদৌ বলেছ নাকি শুধু নাকে কেঁদে এলে?
– বাজে কথা কেন বলছ ? বলেছিলাম … কিন্তু দেরি হয়ে গেছে…আগে হলে হয়ত হত কিন্তু এখন আর সম্ভব নয়। ফাইনাল লিস্টিং হয়ে গেছে।
-আচ্ছা তাই নাকি …তা বলতে পারতে তোমার প্রানসখাকে এটা সেটিং করে দিলে আমি না হয় অ্যালাও করতাম কদিনের জন্য কলকাতার বাইরে কোনো রিসোর্টে ।
-প্লিজ বাসব স্টপ দিস ননসেন্স । তোমার কার্যোদ্ধারের জন্য তুমি কতটা নিচে নামতে পারো তা আমার অজানা নয়।
-আহা চটছ কেন ? নীচে তো তোমরা নিজেরাই নেমেছ সবার আড়ালে , আমি তো সেই আড়াল তুলে দিয়েছি……তবে আড়ালে আবডালে থাকা কেন? তার চাইতে খুললাম খুল্লাই তো ভালো। তাই না…আমারও কাজ হত তোমারও সুখ হত ।
-সুখ?? সুখ কাকে বলে তুমি জানো নাকি বাসব ? যবে থেকে তোমার হাত ধরে পথে নেমেছি সুখের ঠিকানা আমি পথেই হারিয়েছি। …আর সুখ খুঁজিনা আমি তোমার মাঝে , বুঝেছ। সুখ দিতে হবে না আমায় পারলে একটু শান্তি দাও । প্রচন্ড একটা ঘৃণায় ফোনটা কেটে দিল কঙ্কা। একটা ট্যাক্সি আসছিল সামনে …হাত দেখিয়ে তাতে উঠে পড়ল । চোখটা কেমন জ্বালা জ্বালা করছে …কঙ্কার মন বলছে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবে …কিন্তু বুবুন ? তার কি হবে ? …ছেলেটা যে এখনও ছোটো। গায়ের চাদরটা মুখের কাছে টেনে কান্না চাপতে চাপতে ,মিথিলকে বলতে না পারা কথাগুলো কঙকা নিজের মনেই আওড়ে গেলো , ‘ মিথিলদা, সত্যি আমার কিছুই চাওয়ার ছিল না তোমার কাছে । আমি জানি, তুমি আমায় আজও ভালোবাসো …আর বাসো বলেই বোধহয় আজ তুমি আমায় এমন কঠিন কথায় ফিরিয়ে দিলে …আমি জানি, তুমি আমার থেকে সরে থাকতে চাও নি , কিন্তু বাসব যে আমাকে দিনের পর দিন ইচ্ছে করে তোমার দিকে ঠেলে দিচ্ছিল কিছু সুবিধে পাবার লোভে,আর এটা জানতে পারার পরই আমি সরে যেতে চেয়েছি তোমার জীবন থেকে। তার জন্য আমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে মিথিলদা … ।তবু বাসবের অভিসন্ধি আমি কিছুতেই সত্যি হয়ে উঠতে দিই নি ,আর দেবও না। …বারে বারে মনে হয়েছে তোমার কাছে ছুটে যাই …, খোলা হাওয়ায় বুক ভরে শ্বাস নিই কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয়েছে এর সুযোগ বাসব নেবে। নাহ কিছুতেই না …তোমার থেকে দূরে থাকতে হবে আমাকে । নিজের সাজানো পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে দেখে রাগে অন্ধ হয়ে গেছে বাসব । তোমার ক্ষতি করার ভয় দেখিয়েছে…তোমার অফিসে পরিবারে বদনাম করার হুমকি দিয়েছে । ভেবেছিলাম , জানো তোমাকে সব বলব , কিন্তু যেদিন তুমি অভিমান করে আমার ফোন ধরবে না বলেছিলে, সেদিন ভেবেছিলাম এই বেশ হয়েছে …ধীরে ধীরে আমি তোমার চোখের আড়াল হতে হতে তোমার মনের আড়ালও হয়ে যাব ।শুধু একটাই কষ্ট মনের মধ্যে তোলপার করত…তুমি ভুল বুঝলে আমাকে। …… তাই বিশ্বাস করো একবার শুধু তোমার সাথে দেখা করে সব জানাব বলেই , বাসবকে মিথ্যে বলে কাজের অছিলায় তোমার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু এসে মনে হল …কি আর বলব তোমায়? … তোমার ওই চোখ, তোমার ওই না বলা কথা , কফি কাপ হাত তুলে দেওয়ার অজুহাতে আঙ্গুলে আঙ্গুল ছোঁয়ানো, আপাত গাম্ভীর্যয় মনে হল আবার বুঝি তোমাকে দুর্বল করে ফেললাম !!! সত্যি কথাগুলো সব বললে , হয়ত আবার তোমাকে ঘেঁটে ফেলব…!!! অগত্যা প্রসঙ্গটা বদলাতে বাসবের কথা তুললাম, ভাবলাম বলেই ফেলি বাসবের কথা তোমাকে , সত্যি যদি বাসবের কাজটা তুমি করে দিতে পার…যদি ব্যাবসাটা একটু ঠিক হয়,তাহলে বাসবের অমানবিকতাটা কিছুটা কমলে হয়ত দুর্বিষহ জীবনটা একটু একটু করে নতুন বছরে আলোর মুখ দেখবে নয়ত নিজেকে তোমার চোখে খারাপ করে সারাজীবনের মত অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে রাখব । নাহ আর তোমায় আমি কোনোভাবেই বিরক্ত করব না মিথিলদা , আজ থেকে আমি তোমায় আমায় ভালোবাসার সমস্ত দায় থেকে মুক্তি দিলাম…’।
মোবাইলে বাসবের ফোন নম্বরের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে জলে ঝাপসা হয়ে উঠল তার চোখ দুটো। অবশেষে কঙ্কা মোবাইলের কন্ট্যাক্টসে গিয়ে মিথিলের ফোন নম্বরটা ডিলিট করে দিল তার ফোন থেকে । যেন চিরকালের মত সমস্ত পিছুটানকে অস্বীকার করে কঙ্কা তার অতীতের পাতা উলটে ফেলতে চাইল বর্ষশেষের শেষবেলায়। যেন তার আগামী জীবনের সমস্ত টানাপোড়েনে মিথিলের স্মৃতির বোঝাকে সমাধিস্থ করে ফেলতে চাইল । কিন্তু চাইলেই কি সব পারা যায়???? …অগত্যা পড়ে রইল শুধু একরাশ আত্মখননের দীর্ঘশ্বাস আর তার নতুন বছরের নতুন যুদ্ধ শুরুর ভাবনা। …আর এইভাবনার দীর্ঘসূত্রতা কে সঙ্গে করেই কঙ্কার গাড়ি এগিয়ে চলল কলকাতা শহরের মধ্যে দিয়ে তার নিজের বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর দিকে, আলো আলো রাত আর জমকালো চাঁদকে পিছনে ফেলে ।
অফিস থেকে বেরিয়ে এল কঙ্কা। বছরের শেষদিন । ডিসেম্বর মাস। কড়া ঠান্ডা। আলোকিত পথঘাট , হোটেল , রেস্তরাঁ গাছপালা সব কিছু ঝলমল করছে নতুন বছরের অপেক্ষায়। চারিদিকে বেশ মানুষের ঢল , জনজোয়ার বইতে শুরু করেছে কলকাতার আনাচে-কানাচে…পার্ক স্ট্রীটের অলি গলি পাকস্থলিতে । সবাই কত কত খুশি। কিন্তু কঙ্কার মনটা অস্থির লাগছে , কিছুটা এই বিসদৃশ ঘটনার জন্য কিছুটা বা মিথিলের জন্য। কঙ্কা জানে মিথিল এমন নয়… আর আজকের এই কথার তেমন তাৎপর্যও নেই… হয়ত মিথিলের কিছুই করার নেই , তাই নিজের অপারগতা ঢাকতেই এমন অভিনয় করল সে। কঙ্কার বাসবকে চিনতে ভুল হলেও মিথিলকে চিনতে তার এতটুকুও ভুল হয় নি। কিন্তু বাসবকে সে কি বলবে ? এই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই কঙ্কার ফোন বেজে উঠল… ‘আলো আলো রঙ, জমকালো চাঁদ ধুয়ে যায়/ চেনা শোনা মুখ, জানা শোনা হাত ছুঁয়ে যায়, ধীরে ধীরে ঘুম ঘিরে ঘিরে গান রেখে যায়/ কিছু মিছু রাত পিছু পিছু টান ডেকে যায়’ …..বাসবের ফোন। …স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে প্রবল অনীহায় ফোনটা ধরতে বাধ্য হল কঙ্কা। বাসবকে এড়িয়ে তো যাওয়া যাবে না, পেরিয়ে যেতে হবে কিম্বা বলা ভালো মাড়িয়েই যেতে হবে।
-হ্যালো
-কি কথা হল তোমার বুড়ো বয়ফ্রেন্ডের সাথে?
-ওভাবে বলছো কেন?
-আচ্ছা, বুড়ো বললাম বলে বুঝি রাগ হল?
-নাহ , বয়ফ্রেন্ড বলছ বলে গায়ে লাগছে।
– সরি সরি…এক্স বয়ফ্রেন্ড…এবার ঠিক আছে তো।
-চুপ কর ভালো লাগছে না আমার।
-কেন পুরোনো প্রেম উথলে উঠেছে বুঝি। কি মুখে উত্তর নেই কেন?
-ভাল্লাগছে না কথা বলতে।
-তা লাগবে কেন? আমি যে বর তা ওই বর্বরটা কি বলল। আমার ব্যাপারটা একটু সেট করে দেবে কি? তোমার সাথে এতো যে সময় কাটালো তা কি এমনি এমনি? ইন্টারেস্ট দিতে হবে তো!
-কিসের ইন্টারেস্ট? কি সব বলছ?
-ও তুমি বুঝবে না …ছাড়ো। তা বলছেটা কি শুনি ? তুমি আদৌ বলেছ নাকি শুধু নাকে কেঁদে এলে?
– বাজে কথা কেন বলছ ? বলেছিলাম … কিন্তু দেরি হয়ে গেছে…আগে হলে হয়ত হত কিন্তু এখন আর সম্ভব নয়। ফাইনাল লিস্টিং হয়ে গেছে।
-আচ্ছা তাই নাকি …তা বলতে পারতে তোমার প্রানসখাকে এটা সেটিং করে দিলে আমি না হয় অ্যালাও করতাম কদিনের জন্য কলকাতার বাইরে কোনো রিসোর্টে ।
-প্লিজ বাসব স্টপ দিস ননসেন্স । তোমার কার্যোদ্ধারের জন্য তুমি কতটা নিচে নামতে পারো তা আমার অজানা নয়।
-আহা চটছ কেন ? নীচে তো তোমরা নিজেরাই নেমেছ সবার আড়ালে , আমি তো সেই আড়াল তুলে দিয়েছি……তবে আড়ালে আবডালে থাকা কেন? তার চাইতে খুললাম খুল্লাই তো ভালো। তাই না…আমারও কাজ হত তোমারও সুখ হত ।
-সুখ?? সুখ কাকে বলে তুমি জানো নাকি বাসব ? যবে থেকে তোমার হাত ধরে পথে নেমেছি সুখের ঠিকানা আমি পথেই হারিয়েছি। …আর সুখ খুঁজিনা আমি তোমার মাঝে , বুঝেছ। সুখ দিতে হবে না আমায় পারলে একটু শান্তি দাও । প্রচন্ড একটা ঘৃণায় ফোনটা কেটে দিল কঙ্কা। একটা ট্যাক্সি আসছিল সামনে …হাত দেখিয়ে তাতে উঠে পড়ল । চোখটা কেমন জ্বালা জ্বালা করছে …কঙ্কার মন বলছে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবে …কিন্তু বুবুন ? তার কি হবে ? …ছেলেটা যে এখনও ছোটো। গায়ের চাদরটা মুখের কাছে টেনে কান্না চাপতে চাপতে ,মিথিলকে বলতে না পারা কথাগুলো কঙকা নিজের মনেই আওড়ে গেলো , ‘ মিথিলদা, সত্যি আমার কিছুই চাওয়ার ছিল না তোমার কাছে । আমি জানি, তুমি আমায় আজও ভালোবাসো …আর বাসো বলেই বোধহয় আজ তুমি আমায় এমন কঠিন কথায় ফিরিয়ে দিলে …আমি জানি, তুমি আমার থেকে সরে থাকতে চাও নি , কিন্তু বাসব যে আমাকে দিনের পর দিন ইচ্ছে করে তোমার দিকে ঠেলে দিচ্ছিল কিছু সুবিধে পাবার লোভে,আর এটা জানতে পারার পরই আমি সরে যেতে চেয়েছি তোমার জীবন থেকে। তার জন্য আমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে মিথিলদা … ।তবু বাসবের অভিসন্ধি আমি কিছুতেই সত্যি হয়ে উঠতে দিই নি ,আর দেবও না। …বারে বারে মনে হয়েছে তোমার কাছে ছুটে যাই …, খোলা হাওয়ায় বুক ভরে শ্বাস নিই কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয়েছে এর সুযোগ বাসব নেবে। নাহ কিছুতেই না …তোমার থেকে দূরে থাকতে হবে আমাকে । নিজের সাজানো পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে দেখে রাগে অন্ধ হয়ে গেছে বাসব । তোমার ক্ষতি করার ভয় দেখিয়েছে…তোমার অফিসে পরিবারে বদনাম করার হুমকি দিয়েছে । ভেবেছিলাম , জানো তোমাকে সব বলব , কিন্তু যেদিন তুমি অভিমান করে আমার ফোন ধরবে না বলেছিলে, সেদিন ভেবেছিলাম এই বেশ হয়েছে …ধীরে ধীরে আমি তোমার চোখের আড়াল হতে হতে তোমার মনের আড়ালও হয়ে যাব ।শুধু একটাই কষ্ট মনের মধ্যে তোলপার করত…তুমি ভুল বুঝলে আমাকে। …… তাই বিশ্বাস করো একবার শুধু তোমার সাথে দেখা করে সব জানাব বলেই , বাসবকে মিথ্যে বলে কাজের অছিলায় তোমার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু এসে মনে হল …কি আর বলব তোমায়? … তোমার ওই চোখ, তোমার ওই না বলা কথা , কফি কাপ হাত তুলে দেওয়ার অজুহাতে আঙ্গুলে আঙ্গুল ছোঁয়ানো, আপাত গাম্ভীর্যয় মনে হল আবার বুঝি তোমাকে দুর্বল করে ফেললাম !!! সত্যি কথাগুলো সব বললে , হয়ত আবার তোমাকে ঘেঁটে ফেলব…!!! অগত্যা প্রসঙ্গটা বদলাতে বাসবের কথা তুললাম, ভাবলাম বলেই ফেলি বাসবের কথা তোমাকে , সত্যি যদি বাসবের কাজটা তুমি করে দিতে পার…যদি ব্যাবসাটা একটু ঠিক হয়,তাহলে বাসবের অমানবিকতাটা কিছুটা কমলে হয়ত দুর্বিষহ জীবনটা একটু একটু করে নতুন বছরে আলোর মুখ দেখবে নয়ত নিজেকে তোমার চোখে খারাপ করে সারাজীবনের মত অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে রাখব । নাহ আর তোমায় আমি কোনোভাবেই বিরক্ত করব না মিথিলদা , আজ থেকে আমি তোমায় আমায় ভালোবাসার সমস্ত দায় থেকে মুক্তি দিলাম…’।
মোবাইলে বাসবের ফোন নম্বরের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে জলে ঝাপসা হয়ে উঠল তার চোখ দুটো। অবশেষে কঙ্কা মোবাইলের কন্ট্যাক্টসে গিয়ে মিথিলের ফোন নম্বরটা ডিলিট করে দিল তার ফোন থেকে । যেন চিরকালের মত সমস্ত পিছুটানকে অস্বীকার করে কঙ্কা তার অতীতের পাতা উলটে ফেলতে চাইল বর্ষশেষের শেষবেলায়। যেন তার আগামী জীবনের সমস্ত টানাপোড়েনে মিথিলের স্মৃতির বোঝাকে সমাধিস্থ করে ফেলতে চাইল । কিন্তু চাইলেই কি সব পারা যায়???? …অগত্যা পড়ে রইল শুধু একরাশ আত্মখননের দীর্ঘশ্বাস আর তার নতুন বছরের নতুন যুদ্ধ শুরুর ভাবনা। …আর এইভাবনার দীর্ঘসূত্রতা কে সঙ্গে করেই কঙ্কার গাড়ি এগিয়ে চলল কলকাতা শহরের মধ্যে দিয়ে তার নিজের বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর দিকে, আলো আলো রাত আর জমকালো চাঁদকে পিছনে ফেলে ।
__________________________
© Copyright 2016 @indrila, All rights Reserved. Written For: Oimookh