This entry is part 2 of 6 in the series বল মন 'সুখ' বল

পর্ব – ২।

আজ বছরের শেষ দিন। কাল নতুন বছরে মামমামের জন্য গিফট কিনতে হবে কিছু মিথিলকে । আজ অফিসে জে.কে.কন্সট্রাকশনের সাথে ভাইটাল মিটিং আছে তার । টেন্ডার কোট নিয়ে ফাইনাল আলোচনা। রাতে আবার থার্টি ফার্স্ট ইভের জন্য সৃঞ্জার বন্ধু আর তাদের হাব্বিদের নিয়ে লেট নাইট পার্টি… তার মধ্যে কঙ্কার ফোনটা এসে যেন সব গুলিয়ে দিল মিথিলের আজকের প্ল্যানিংটাকে। সত্যি মেয়েরা অনেকটা পারে । অথচ একটা সময়ে এই কঙ্কাই তাকে দিনের পর দিন এড়িয়ে চলেছে , বহু চেষ্টা করেও সে নাগাল পায় নি কঙ্কার… অনেক বুঝিয়েও তাদের মাঝের পোড়ে পাওয়া সম্পর্কের রেশটুকুকে রক্ষা করতে পারে নি সে…শেষ পর্যন্ত কঙ্কার সাথে স্বপ্নিল সম্পর্কটার ইতি টানতে বাধ্য হয়েছিল মিথিল । তার খুব খুব অসুবিধে হয়েছিল কঙ্কাকে মন থেকে সরিয়ে রাখতে। কঙ্কার সাথে কাটানো সময়গুলো তাকে মাঝে মাঝে ভীষণ অস্থির করে তুলত। এমনকি সৃঞ্জার সাথে অতি ঘনিষ্ঠ মুহুর্তেও তার কেবলি কঙ্কার ছোঁয়াটা মনে পড়ে যেত । খুব সত্যি বললে যদিও কঙ্কার সাথে তার হয়ত একটা পরকীয়া সম্পর্কই ছিল কিন্তু সৃঞ্জার থেকেও অনেক বেশি সহজ ছিল মিথিল কঙ্কার কাছে। আসলে তাদের দুজনের মধ্যের চাওয়া পাওয়াটা যে অতটা দুর্বার ছিল না। কিন্তু সেই সব তো চুকে বুকে গেছে নয় নয় করে আজ বছর তিনেক হল। তবে সম্পর্কটা যেমন একদিনে শেষ হয়ে যায় নি তেমনি মিথিলের সব ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাও অত সহজ হয় নি । … বেশ খানিকটা সময় পার হয়ে গেছিল নিজেকে সব কিছুর বাইরে নিয়ে যেতে, তারপর ধীরে ধীরে নিজের মনটাকে সৃঞ্জাতে সীমাবদ্ধ করতে পেরেছিল মিথিল…একটা সময় পরে সৃঞ্জাকেই জীবনের একমাত্র অবলম্বন ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল সে এই কটা বছরে। অথচ তিন বছর পর আজ হঠাত কি এমন হল যে কঙ্কা নিজে থেকে দেখা করতে চাইছে মিথিলের সাথে ? তাহলে কি কঙ্কা আবার ফিরতে চাইছে নাকি তাদের পুরনো সম্পর্কের বৃত্তে । সে কি আবার ফিরে দেখতে চাইছে পুরোনো দিনগুলোকে । কিন্তু কঙ্কা যে বলেছিল সে আর চায় না এই সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে। একদিকে মিথিল আর একদিকে তার স্বামী বাসব …দুজনের মাঝে সে হাঁফিয়ে উঠেছিল! কঙ্কা তো আরও বলেছিল ,যে বাসব যত খারাপই হোক হাজার হলেও সে তার অগ্নিসাক্ষী করা স্বামী, তার একমাত্র সন্তান বুবুনের বাবা , তাকে অস্বীকার করবে কি করে কঙ্কা! আর মিথিলের সাথে তো পরকীয়া প্রেম…আনকন্ডিশনাল লাভ ! …সম্পর্কটা চালিয়ে যাবার আদৌ কোনও দায়বদ্ধতা ছিল কি কঙ্কার ?ছিল না বোধহয় আর তাই স্বার্থপরের মত নিঃশব্দে মিথিলের হাত ছেড়ে দিয়েছিল কঙ্কা । অবশ্য মিথিলও বলেছিল ,
-দেখ , কঙ্কা জোর করে তো সম্পর্ক রাখা যায় না …অসুবিধে থাকলে তুমি সময় নাও …কিছুদিন দুরত্ব বজায় রাখো, কিন্তু একেবারে সরে যেও না …সত্যি বলতে আমরা দুজনেই সংসারে বাঁধা পড়ে আছি চাইলেও কেউই কিন্তু নিজেদের জায়গা থেকে সরে আসতে পারব না কোনোদিনই …তবু দুজনেই দুজনের কাছে একটা উন্মুক্ত খোলা জানলা…এমন করে জানলাটা বন্ধ করে দিলে আরও গুমরে মরবে কঙ্কা!… কাছে থাকতে হবে না। কিন্তু এমন দুরত্বে কি থাকা যায় না যাতে হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায় …একটা পরম নিশ্চিন্ত আশ্রয়!!!… কিন্তু না কঙ্কা রাজি হয়নি । কি যে হয়েছিল ? কে জানে ? শেষমেশ মিথিল বিরক্ত হয়ে বলেছিল,
– ঠিক আছে আমি তোমার কথাই মেনে নিলাম, কিন্তু মনে রেখ, আজ যেমন ভাবে তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ , এরপর যদি কোনদিন তুমি ভুল বুঝে ফিরে আসতে চাও ,আমিও কিন্তু তোমাকে চিনতে পারব না।‘’
…কিন্তু কই সকালবেলা ফোনে কঙ্কা নামটা শোনার পর, সে ফোনটা কাটতে পারল না তো ?

……একথা সেকথা ভাবতে ভাবতে আজ মিথিলের একটু দেরিই হয়ে গেল। একবারে স্নান সেরে বেরিয়ে ড্রেসকোর্ট করার সময় আজ এতদিন পর সাদা আর ধুসর রঙের মাফলারটা কেমন যেন গলায় জড়াতে ইচ্ছে করল মিথিলের । একবছর জন্মদিনে কঙ্কা দিয়েছিল তাকে । মাফলারটা নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে একটা লুকোনো চেনা গন্ধ তাকে বারে বারে পুরোনো দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ।মনে মনে এক অমোঘ টান আজও তাকে কঙ্কার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলছিল।

-কিগো ব্রেকফাস্ট করবে তো?
-হ্যাঁ চল, হয়ে গেছে , যাচ্ছি।
সৃঞ্জার ডাকে সাতপাঁচ ভাবা বন্ধ করে মাফলারটা গলায় ফেলে ডাইনিং-এ এসে বসল মিথিল। খাবার ততক্ষনে রেডি । মামমাম এসে গলা জড়িয়ে বলল,
– গুড মর্নিং পাপা।
– মর্নিং মামমাম।
– সন্ধ্যেবেলা ফ্লুরিজের কেক আনছো তো? দাদাইও খাবে বলেছে।
– হুম , মনে আছে আমার…আর তার সঙ্গে একটা সারপ্রাইজ গিফটও ।
– পাপা, আজ তো তোমাদের থার্টি ফার্স্টের পার্টি থাকবে , আমি তো মামার বাড়ি থাকব রাতে , আমার সাথে তো তোমার আজ আর দেখাই হবে না , কাল দেখা হবে মামার বাড়িতে। …তুমি কিন্তু প্লিজ দিদুন আর দাদাই এর কাছে কাল তাড়াতাড়ি মাকে নিয়ে পৌঁছে যাবে… একদম আমার ঘুম ভাঙ্গার আগেই …আমি যেন ঘুম থেকে উঠেই তোমাকে দেখতে পাই আর সবার প্রথম হ্যাপি নিউ ইয়ারটা তোমার মুখেই শুনতে পাই।
– ওকে মাই লিটীল অ্যাঞ্জেল। তাই হবে । তুমি কিন্তু আজ দিদুন আর দাদাইকে একদম বিরক্ত করবে না।
সৃঞ্জা বলল,
-তুমি অফিসে পৌঁছে একবার গাড়িটা পাঠিয়ে দিও, আমি মামমামকে মায়ের কাছে রাখতে যাব…মা দুপুরে খেতে বলেছে…আমরা ওখানে পৌঁছে গাড়ি ছেড়ে দেব । বিকেলে আমি একটু পার্লারে যাব। কিন্তু সন্ধ্যেবেলা তুমি কি করবে শুনি ?
-মানে? যাব তো পার্টিতে।
– না তুমি কি আমাকে নিতে আসবে নাকি ,আমি পৌঁছে যাব তোমার অফিসে।
-দেখে নিচ্ছি…মিটিং হয়ে গেলে জানিয়ে দেব । তুমি রেডি হয়ে থেকো। … আর না হয় এক কাজ কর গাড়ি ছাড়তে হবে না, তুমি গাড়িটা রেখ… আমার কাজ মিটে গেলে আমি ফোন করে দেব তুমি গাড়ি নিয়েই চলে এস অফিসে একসাথে বেরিয়ে যাব।
-হুম সেটাই ঠিক হবে…তবে প্লিজ দেরি কর না যেন।
____________________________________ক্রমশ।

Series Navigation<< বল মন ‘সুখ’ বলবল মন ‘সুখ’ বল >>
© Copyright 2016 @indrila, All rights Reserved. Written For: Oimookh