পর্ব-৩
পৃথার সাথে অনীশের সম্পর্কটা যতটা স্বামী স্ত্রীর, ততটাই মিথোজীবিতার …ঠিক তেমনি পেলের সাথেও অনীশের বেশ একটা বন্ধু বন্ধু ভাব। বাবা ছেলে এই ব্যাপারটা মনে হয় না…। কোথায় যেন দুজনেই অনেকটা একইরকম …দুজনেই ছেলেমানুষ ।সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনীশ ফ্যাক্টারীতে থাকে, তারপর দুপুরে বাড়ি এসে লাঞ্চ করে…সেরকম কাজ না থাকলে একটু বিকেল করে অফিসে যায় ,…ছুটিছাটায় পৃথাকে আর পেলেকে নিয়ে বেরোয় কখনও সখনও … আর মাঝে মাঝে বিকেলে পেলেকে নিয়ে পার্কে আসে। পেলে একটু ছোটাছুটি করে, বল নিয়ে খেলে…আর অনীশ ঘাসের ওপর শুয়ে শুয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে…আর কি যেন ভাবে।
-বাবাই , এস না একটু খেলি…
-ওই বিচ্ছু, তোর অতগুলো বন্ধু তো খেলছে, যা না ওদের সাথে গিয়ে খেল না…
-ওরা খেলায় নিচ্ছে না আমায়।
-কেন?
-বলছে ‘আমি তো ছোট’।
-সেকি ওরা খুব বড়ো নাকি?
-তুমি তো বড়ো …তুমি বল না ওদের।
-নারে, আমার বড়ো হতে ভাল লাগে না।
-কিন্তু আমি কবে বড়ো হব বাবাই?
-দাঁড়া আগে আমি বড়ো হই , তারপর আমি যখন বুড়ো হব তখন তুই বড়ো হবি।
-তুমি কি করছ বাবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে? এখন তো তারা নেই!!
-মানে?
-আমার যখন ঘুম আসে না ঠাম্মাম বলে জানলা দিয়ে আকাশের তারা গুনতে। কিন্তু এখন তো বিকেল ,কত আলো…তুমি কি দেখছ আকাশে?
-আরে বাবা , শুধু তারা কেন রে আকাশে কত কি দেখার আছে জানিস? কত খেলা হয় মেঘেদের… আয় আমার পাশে শুয়ে পর আমি দেখাচ্ছি তোকে?
……পেলে বাবার পাশে ডিগবাজি খেয়ে হাত মেলে শুয়ে পরে ঘাসের ওপর । অনীশ বলে, রোজ রোজ বল নিয়ে কেন খেলব …আজ আমরা অন্য কিছু খেলব। বল তো ওই যে আকাশের ওই কোণে লাল আলো টা যে মেঘটার ফাঁকে দেখা যাচ্ছে , সেই মেঘটাকে কেমন দেখতে লাগছে?
-কই কোথায় ? গোটা আকাশটাই তো লাল!!
-ওই তো দেখ না তোর ডানদিকে দেখ…ও—ই-ই যে
-ওই সাদা কালো মেঘটা?
– হুম…ঠিক পান্ডার মত না?…সেই চিড়িয়াখানায় দেখা?
-হি হি হি…না না ভাল্লুকের মত।
-আচ্ছা তাই…বেশ এবার দেখ দূরে গাছের ফাঁকে দুটো প্রজাপতি কেমন উড়ছে …।
-আমি ধরব ওদের ?
…এই বলেই অনীশের পাশ থেকে পেলে লাফিয়ে উঠে ছুট লাগায়। অনীশ দেখে কি অবলীলায় পেলে সাদা প্রজাপতি আর হলুদ প্রজাপতির পিছনে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। অদ্ভুত একটা ভালো লাগায় অনীশের চোখটা চিক চিক করে… পকেটে ফোনটা ভাইব্রেট করছে…অনীশ দেখে মায়ের ফোন । বসুধা চেনেন তার ছেলেকে ভালমতো । ছেলের হাতে নাতিকে ছেড়েও তার শান্তি নেই…
-কিরে পেলে কি করছে? ওকে দে তো একবার ফোনটা ।
-ওমা …ও তো এখন প্রজাপতি ধরছে।
-মানে? কোথায় কোথায় দৌড়োচ্ছে …দেখ দেখ …পড়ে যাবে তো রে।
-আমি আছি তো ? কি আর হবে ? তুমি অত ভাবলে তুমিই নিয়ে এস এবার থেকে।
-ওকে দে না একবার ফোনটা ।
-দাঁড়াও …পেলে এদিকে আয়…ঠাম্মামের ফোন …কথা বল।
……বাবার হাঁক পেয়ে পেলে হাঁফাতে হাঁফাতে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল…
-দেখলে তো তোমার জন্য পালিয়ে গেল প্রজাপতি দুটো।
-থাক অনেক হয়েছে এবার বাবার সাথে বাড়ি এস…
-না না আমি এখন পাখির বাসা দেখব…বাবা বলেছে আমায় দেখাবে।
-না আর বাসা দেখে কাজ নেই …তুমি বাবাকে নিয়ে বাড়ি এস…কি করছে বাবা?
-বাবাই তো আকাশে মেঘেদের খেলা দেখছে।
-কি???…আচ্ছা ফোনটা বাবাকে দাও…
-বাবাই ঠাম্মাম ডাকছে।
-হ্যালো …কি বলছ বল?
-তুই বাড়ি আয় ওকে নিয়ে… সন্ধ্যেবেলা বেরোবি তো?
-হুম …যাচ্ছি।
ফোনটা কেটে দিয়ে আবার যেন ভাবনায় ডুবে যায় অনীশ …পেলে তখন একটা কাঠি দিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকে মাঠের একপাশে…
……অনীশের জগৎটা সত্যিই তেমন ডাইন্যামিক নয়…ব্যবসার কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটা লেখালিখির জগৎ …তেমন চাপেরও নয়…তবু তার মাঝে মাঝে কেমন যেন অসহিষ্ণু লাগে… শুধু তার বাবা মাঝে মাঝে তার এমন ভাবলেশহীন অবস্থাটায় ভীষণ বিরক্ত হন…রাগ করেন…বলেন “তুমি আর কবে বড়ো হবে অনীশ? বয়স তো হল…এখন থেকে সব দায়দায়িত্ব বুঝে না নিলে আমি চোখ বুজলে কি করবে তখন??…এইভাবে আর কতদিন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরবে?”……অনীশ চুপচাপ মাথা নামিয়ে শোনে…একটা অপরাধবোধ কাজ করে তার…ভাবে সত্যিই আজও সে অম্বরীশ মিত্রের ছেলে হয়েই রইল…জীবনে কিছুই আর করা হয়ে উঠল না…মনটা কেমন যেন অস্বস্তিতে ভরে যায় …তবে বেশিক্ষণ নয় বাবার রাগী চোখ দুটোর বাইরে চলে এলেই মনটায় ধীরে ধীরে ফুরফুরে হাওয়া লেগে যায়…বেশ হালকা লাগে । …পৃথা আশে পাশে থাকলে একটু আরক্ত মুখে শাসন করে…তারপর অনীশের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলে …
-তোমাকে গম্ভীর হয়ে থাকতে দেখলে আমার মোটে ভাল লাগে না… কিন্তু বাবা কি কিছু ভুল বলেন ? ভেবে বল দেখি?
-না ঠিক ই তো বলেন …কিন্তু আমি যে মন বসাতে পারি না…
-তা বললে হবে?
-জানি হবে না…ঠিকই বলছ সবাই …আচ্ছা দেখি এবার চেষ্টা করে দেখি একবার।
……তার ভাবনায় ছেদরেখা টেনে পেলে বলে,
-বাবা দেখ কি বানালাম!
-কিরে?
-এই যে একটা ছোট্ট গর্ত … এটা আমার ব্যাঙ্ক
-ব্যাঙ্ক ? এর মধ্যে কি রাখবি?
-এই দেখ একটা পয়সা পেয়েছি কুড়িয়ে …এটা পুঁতে রাখব…দাদু বলেছে পয়সা ব্যাঙ্কে জমা রাখলে পরে অনেক অনেক হয়ে যায়।
……পেলের ভাবনায় হেসে ফেলে অনীশ …বলে “ঠিক আছে, এখন চল সন্ধ্যে হয়ে আসছে আমরা বাড়ি যাই। …পরে এসে বাকি কাজটা করব…আর গর্তটা আরেকটু বাড়াতে হবে তো …আজ ছেড়ে দে…।”…………………….. …………………….. …………………….. …………………….ক্রমশঃ
-ওই বিচ্ছু, তোর অতগুলো বন্ধু তো খেলছে, যা না ওদের সাথে গিয়ে খেল না…
-ওরা খেলায় নিচ্ছে না আমায়।
-কেন?
-বলছে ‘আমি তো ছোট’।
-সেকি ওরা খুব বড়ো নাকি?
-তুমি তো বড়ো …তুমি বল না ওদের।
-নারে, আমার বড়ো হতে ভাল লাগে না।
-কিন্তু আমি কবে বড়ো হব বাবাই?
-দাঁড়া আগে আমি বড়ো হই , তারপর আমি যখন বুড়ো হব তখন তুই বড়ো হবি।
-তুমি কি করছ বাবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে? এখন তো তারা নেই!!
-মানে?
-আমার যখন ঘুম আসে না ঠাম্মাম বলে জানলা দিয়ে আকাশের তারা গুনতে। কিন্তু এখন তো বিকেল ,কত আলো…তুমি কি দেখছ আকাশে?
-আরে বাবা , শুধু তারা কেন রে আকাশে কত কি দেখার আছে জানিস? কত খেলা হয় মেঘেদের… আয় আমার পাশে শুয়ে পর আমি দেখাচ্ছি তোকে?
……পেলে বাবার পাশে ডিগবাজি খেয়ে হাত মেলে শুয়ে পরে ঘাসের ওপর । অনীশ বলে, রোজ রোজ বল নিয়ে কেন খেলব …আজ আমরা অন্য কিছু খেলব। বল তো ওই যে আকাশের ওই কোণে লাল আলো টা যে মেঘটার ফাঁকে দেখা যাচ্ছে , সেই মেঘটাকে কেমন দেখতে লাগছে?
-কই কোথায় ? গোটা আকাশটাই তো লাল!!
-ওই তো দেখ না তোর ডানদিকে দেখ…ও—ই-ই যে
-ওই সাদা কালো মেঘটা?
– হুম…ঠিক পান্ডার মত না?…সেই চিড়িয়াখানায় দেখা?
-হি হি হি…না না ভাল্লুকের মত।
-আচ্ছা তাই…বেশ এবার দেখ দূরে গাছের ফাঁকে দুটো প্রজাপতি কেমন উড়ছে …।
-আমি ধরব ওদের ?
…এই বলেই অনীশের পাশ থেকে পেলে লাফিয়ে উঠে ছুট লাগায়। অনীশ দেখে কি অবলীলায় পেলে সাদা প্রজাপতি আর হলুদ প্রজাপতির পিছনে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। অদ্ভুত একটা ভালো লাগায় অনীশের চোখটা চিক চিক করে… পকেটে ফোনটা ভাইব্রেট করছে…অনীশ দেখে মায়ের ফোন । বসুধা চেনেন তার ছেলেকে ভালমতো । ছেলের হাতে নাতিকে ছেড়েও তার শান্তি নেই…
-কিরে পেলে কি করছে? ওকে দে তো একবার ফোনটা ।
-ওমা …ও তো এখন প্রজাপতি ধরছে।
-মানে? কোথায় কোথায় দৌড়োচ্ছে …দেখ দেখ …পড়ে যাবে তো রে।
-আমি আছি তো ? কি আর হবে ? তুমি অত ভাবলে তুমিই নিয়ে এস এবার থেকে।
-ওকে দে না একবার ফোনটা ।
-দাঁড়াও …পেলে এদিকে আয়…ঠাম্মামের ফোন …কথা বল।
……বাবার হাঁক পেয়ে পেলে হাঁফাতে হাঁফাতে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল…
-দেখলে তো তোমার জন্য পালিয়ে গেল প্রজাপতি দুটো।
-থাক অনেক হয়েছে এবার বাবার সাথে বাড়ি এস…
-না না আমি এখন পাখির বাসা দেখব…বাবা বলেছে আমায় দেখাবে।
-না আর বাসা দেখে কাজ নেই …তুমি বাবাকে নিয়ে বাড়ি এস…কি করছে বাবা?
-বাবাই তো আকাশে মেঘেদের খেলা দেখছে।
-কি???…আচ্ছা ফোনটা বাবাকে দাও…
-বাবাই ঠাম্মাম ডাকছে।
-হ্যালো …কি বলছ বল?
-তুই বাড়ি আয় ওকে নিয়ে… সন্ধ্যেবেলা বেরোবি তো?
-হুম …যাচ্ছি।
ফোনটা কেটে দিয়ে আবার যেন ভাবনায় ডুবে যায় অনীশ …পেলে তখন একটা কাঠি দিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকে মাঠের একপাশে…
……অনীশের জগৎটা সত্যিই তেমন ডাইন্যামিক নয়…ব্যবসার কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটা লেখালিখির জগৎ …তেমন চাপেরও নয়…তবু তার মাঝে মাঝে কেমন যেন অসহিষ্ণু লাগে… শুধু তার বাবা মাঝে মাঝে তার এমন ভাবলেশহীন অবস্থাটায় ভীষণ বিরক্ত হন…রাগ করেন…বলেন “তুমি আর কবে বড়ো হবে অনীশ? বয়স তো হল…এখন থেকে সব দায়দায়িত্ব বুঝে না নিলে আমি চোখ বুজলে কি করবে তখন??…এইভাবে আর কতদিন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরবে?”……অনীশ চুপচাপ মাথা নামিয়ে শোনে…একটা অপরাধবোধ কাজ করে তার…ভাবে সত্যিই আজও সে অম্বরীশ মিত্রের ছেলে হয়েই রইল…জীবনে কিছুই আর করা হয়ে উঠল না…মনটা কেমন যেন অস্বস্তিতে ভরে যায় …তবে বেশিক্ষণ নয় বাবার রাগী চোখ দুটোর বাইরে চলে এলেই মনটায় ধীরে ধীরে ফুরফুরে হাওয়া লেগে যায়…বেশ হালকা লাগে । …পৃথা আশে পাশে থাকলে একটু আরক্ত মুখে শাসন করে…তারপর অনীশের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলে …
-তোমাকে গম্ভীর হয়ে থাকতে দেখলে আমার মোটে ভাল লাগে না… কিন্তু বাবা কি কিছু ভুল বলেন ? ভেবে বল দেখি?
-না ঠিক ই তো বলেন …কিন্তু আমি যে মন বসাতে পারি না…
-তা বললে হবে?
-জানি হবে না…ঠিকই বলছ সবাই …আচ্ছা দেখি এবার চেষ্টা করে দেখি একবার।
……তার ভাবনায় ছেদরেখা টেনে পেলে বলে,
-বাবা দেখ কি বানালাম!
-কিরে?
-এই যে একটা ছোট্ট গর্ত … এটা আমার ব্যাঙ্ক
-ব্যাঙ্ক ? এর মধ্যে কি রাখবি?
-এই দেখ একটা পয়সা পেয়েছি কুড়িয়ে …এটা পুঁতে রাখব…দাদু বলেছে পয়সা ব্যাঙ্কে জমা রাখলে পরে অনেক অনেক হয়ে যায়।
……পেলের ভাবনায় হেসে ফেলে অনীশ …বলে “ঠিক আছে, এখন চল সন্ধ্যে হয়ে আসছে আমরা বাড়ি যাই। …পরে এসে বাকি কাজটা করব…আর গর্তটা আরেকটু বাড়াতে হবে তো …আজ ছেড়ে দে…।”……………………..