This entry is part 2 of 8 in the series চাঁদের পরিক্রমণ

 

পর্ব – ২/


 

 

মন খারাপ করা একটা দুপুরবেলা……জানলার বাইরের আকাশটা কালো মেঘে সেজে আছে…..চাঁদ হাতের সব কাজ সামলে ফোনটা নিয়ে খাটে এসে বসল ……একটা সময় ছিল, চাঁদের জীবনে ব্যস্ততা কিছু কম ছিল না….ইনফ্যাক্ট সারাটা দিনই প্রায় কেটে যেত অফিস ,সাইট আর বাড়ি করে ।খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলতে যারা ছিল আজকাল তাদের সাথেও আর যোগাযোগ হয়ে ওঠে না…..চাঁদ মোবাইলের কনট্যাক্টস দেখতে লাগল….কি আশ্চর্য , এমন কেউ নেই যাকে ফোন করে একটু নিজেকে ভুলিয়ে রাখা যায়…অথচ সে ছিল একটা সময়…তখন সারাদিন কথাই কথা….চাঁদ মিউজিক সিস্টেমটা অন করল….. এফ.এম এ গান বেজে উঠল ……”এমনি বরষা ছিল সেদিন /শিয়রে প্রদীপ ছিল মলিন / তব হাতে ছিল অলস বীন /মনে কি পড়ে প্রিয় “…..এই গানটা শুনতে শুনতে চাঁদ হারিয়ে গেল অতীতে…..হোয়াট আ কো-ইনসিডেন্স ….সেদিনও এই গানটাই বাজছিল……কতদিন আগের কথা ।দিনটা ছিলো একটা শনিবার …..এরকমই দুপুর বেলা চাঁদ কলেজ থেকে ফিরে নিজের ঘরে গান শুনছে …..ভীষণ চাপ যাচ্ছে কলেজে ….ড্রয়িং সাবমিশান চলছে….প্রায় এক সপ্তাহ হল…..চাঁদ নিজের শরীরটা বিছানায় এলিয়ে বালিশটা আঁকড়ে শুয়েছিল…..হঠাৎ কিছু একটা ভেবে উঠে বসল…..টেলিফোনটা সাইড টেবিল থেকে হাতের কাছে নিয়ে একটু ভাবল….. ‘কি যেন নম্বরটা?’……তারপর ডায়াল করল….অপর প্রান্তে রিং শোনা যাচ্ছে ….চাঁদ শ্বাস বন্ধ করে দুটো রিং শুনে লাইনটা কেটে দিল ।….কিন্তু চুপ করে বসে থাকতেও পারল না…ইতস্তত করে আবার ডায়াল করল…..অপর প্রান্তে একটা ভারী কন্ঠস্বর…’হ্যালো’ চাঁদ তড়িঘড়ি ফোনটা কেটে দিল….. একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে একটু শাসন করে , বিছানায় শুতে যাবে, …ফোনটা বেজে উঠল । চাঁদ ভাবল বুঝি বাবার ফোন….’মা তো নীচে থেকে ধরবেই’….কিন্তু ফোনটা দুটো রিং হয়ে কেটে গেল….চাঁদ ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল….তার মন বলছিল এখনি আবার রিং হবে…..ভাবামাত্রই ফোনটা সত্যিই বেজে উঠল…..
চাঁদ: হ্যালো
কপটরাগে একটা পুরুষ কন্ঠ বলে উঠলো …’ফোন করে কথা না বলে কেটে দেওয়ার মানে কি ?’ যদিও চাঁদ বিশ্বাস করতে পারছিল না….তবুও রুদ্ধশ্বাসে জিজ্ঞেস করল ‘কে বলছেন ‘? ফোনের ওপার থেকে অবিশ্বাস্য ভাবে সেই অপরিচিত কন্ঠস্বর বলে উঠলো ‘তুই চন্দ্রিমা তো ? ফোনটা তো আমাকেই করলি….তাও নামটা বলতে হবে? চাঁদের মনে তখন কেউ যেন হাঁপর টানছে……স্থবির অবস্থাটা একটু কাটিয়ে বিষ্ময়ের সুরে বললো ‘ সোহম….?….নম্বর পেলি কোথা থেকে?….
সোহম: তুই দিলি তো …(একটু হেসে বলল) চাঁদ: আমি?????….হেঁয়ালি করিস না….বল কে দিল নম্বর ?আর আমি ফোন করেছি তাই বা বললি কেন?
সোহম: আরে বাবা ,দম নিতে দিবি তো …..সেটাই তো কথা….কলার আই ডি ‘র কাজটাই তো এই ম্যাম ।
চাঁদ বেশ খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলে….’আসলে বাসে সেদিন তোর এক বন্ধুকে নম্বর টা দিলি না….এতজোরে চিৎকার করে বলছিলি যে আমার কানেও পৌঁছেছিল…..আর আমার মেমারী এমনিতেই বেশ শার্প……’
কথাটা শেষ করার আগেই সোহম চপল স্বরে বললো …..’হুমমম…..আমি জানি তো …..তাই তো নম্বর টা তোকেই শুনিয়ে আবৃত্তি করলাম…..আর সেইদিন থেকেই ভাবছি ফোনটা কবে করবি……কলেজে দেখাও হচ্ছিলো না…..তোরা মেয়েরা ভাঙবি ,তবু মচকাবি না….. ।
এবার চাঁদ বেশ সপ্রতিভ হয়ে বলল’ এর মানেটা কি দাঁড়াল…..সেয়ানা গিরি!! ফোন নং চাইলে আমি কি দিতাম না?
সোহম: বলা যায় না….মুখের ওপর না বলে দিলে মানে লাগত….আফটার অল তোর সিনিয়র তো ।
চাঁদ : অত জুনিয়র সিনিয়র বুঝি না….চাইলে আমি ভাল বন্ধু হতে পারি….তবে ….?
সোহম: তবে কি?…..আচ্ছা ছাড়….তুই ক’টার বাসে এখান থেকে যাস….?
চাঁদ: কেন ? ন’টা কুড়ি….
সোহম: ঠিকই আছে ….সোমবার তাহলে সিটিসি বাসস্ট্যান্ডে ঐসময়ই দেখা হবে….ও.কে…বাই…রাখছি
চাঁদ : আচ্ছা …..বাই টাটা
চাঁদ যেন এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল……দরজায় কলিংবেলের আওয়াজে তার সম্বিত ফিরে এল………… ।
…………………………………………………………………………………………………ক্রমশ

Series Navigation<< চাঁদের পরিক্রমণ/১চাঁদের পরিক্রমণ /৩ >>
© Copyright 2014 @indrila, All rights Reserved. Written For: Oimookh